প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, সেই ওসি মিজানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মো. নোমানের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন মো. রহিম নামে এক ব্যবসায়ী।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশের জন্য আগামী ৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- কতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান, এসআই আনিসুল ইসলাম, এএসআই খায়রুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও সোর্স দেলোয়ার হোসেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ব্যবসায়ী রহিম গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় কাজ শেষে চরকালিগঞ্জ জেলা পরিষদ মার্কেট থেকে বাসায় ফিরছিলেন। রাত ৮টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া ব্রিজের ওপর পৌঁছুলে অজ্ঞাতনামা তিনজন তার গতিরোধ করেন। তারা নিজেদের ঢাকা জেলা ডিবি পুলিশ পরিচয় দেন। রহিমের নামে ডিবিতে মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে বলে জানায়।
এসময় রহিমকে একটি দোকানে নিয়ে তল্লাশি করা হলেও তার কাছ থেকে কিছু উদ্ধার হয়নি। দোকানে উপস্থিত স্থানীয় লোকজন রহিমকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। এরপর তারা রহিমকে বাবুবাজার ব্রিজের কাছে নিয়ে যান। সেখানে এসআই আনিসুল ইসলাম, এএসআই খায়রুল ইসলাম ও সোর্স দেলোয়ার উপস্থিত ছিলেন।
এই তিনজন নিজেদের কাছ থেকে ৬৫০ পিস ইয়াবা বের করে এগুলো রহিমের কাছ থেকে পাওয়া গেছে বলে জানায়।
এসআই আনিসুল রহিমকে বলেন, ‘যদি ফাঁসতে না চাস তাহলে দুই লাখ টাকা জোগাড় কর। না হলে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে মামলায় ফাঁসিয়ে দেবো।’ এ থেকে বাঁচার জন্য রহিম তার কাছে থাকা এক ভরি স্বর্ণের চেইন, নগদ ১৩ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেন। দাবিকৃত ২ লাখ টাকা দিতে না পারায় তারা রহিমকে রাত সোয়অ ৯টার দিকে থানায় নিয়ে যান। পরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে রহিম তাদের আরও ৫০ হাজার টাকা দেন। রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ওসি মিজানুর রহমান রহিমকে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘তোকে বাঁচিয়ে দিলাম। ছোট মামলা দিলাম, দু-একদিনের মধ্যে বের হয়ে আসতে পারবি।’
মামলার এজাহারে বাদী আরও অভিযোগ করেন, দাবিকৃত টাকা পেয়ে রহিমের বিরুদ্ধে ১০ পিস ইয়াবার মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। ১৭ দিন জেলে থেকে গত ৩০ অক্টোবর মুক্তি পান রহিম।
মামলার বাদী রহিম মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে আদালতে আবেদন করেছেন।
এর আগে গেল ১০ আগস্ট ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে একই আদালতে মামলা দায়ের করেন কোতোয়ালি থানা এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী মো. সোহেল।
ওই মামলার আসামিরা হলেন- কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান, উপপরিদর্শক (এসআই) পবিত্র সরকার, খালেদ শেখ ও মো. শাহিনুর, কনস্টেবল মিজান এবং পুলিশের সোর্স মোতালেব।
ওই মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, গত ২ আগস্ট বুড়িগঙ্গা পার হয়ে মেয়ের বাসায় যাওয়ার পথে বাদী সোহেলকে তল্লাশি করে তার পকেটে থাকা ২ হাজার ৯০০ টাকা নিয়ে নেয় পুলিশ। তল্লাশি শেষে পুলিশ সোহেলকে চলে যেতে বললে সোহেল সেই টাকা ফেরত চায়। তখন পুলিশ তাকে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে সেখানে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। লোকজন এসে জানতে চান, কী হয়েছে? তখন আসামিরা বলে, তার পকেটে দুই প্যাকেট ইয়াবা পাওয়া গেছে। তাকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হিসেবে ফাঁসাতে চান। তখন সোহেল তাদের কাছে ওয়ারেন্টের কাগজ দেখতে চান।
পরে আসামিরা তাকে থানায় নিয়ে যায় এবং তার পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা সেখানে গেলে আসামিরা তাদের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। জেএমবির সদস্য বলে সোহেলকে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। এসময় ওসি সোহেলের পরিবারকে টাকার ব্যবস্থা করতে বলেন।
সোহেলের পরিবারের সদস্যরা রাতেই আসামিদের ২ লাখ টাকা দেন। পরদিন সকালে আরও ১ লাখ টাকা দেন। টাকা দেয়ার পর সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, মিটফোর্ড হাসপাতালের ভেতরে তিনি মাদক সেবন এবং শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত করছিলেন। তার বিরুদ্ধে নন-এফআইআর করে পুলিশ। আবার আসামিরাই তাকে জামিন করিয়ে আনেন। পরে ভিকটিম সোহেল আদালতে এসে ওসিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন।