আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও ইউএনওকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ

0

মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ভূমি দখলসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পরিবহন শ্রমিক নেতা গোলাম সারোয়ার প্রধান বিপ্লবের বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে স্থানীয় মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও পলাশবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। দলীয় ও স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে পলাশবাড়ী-সাদুল্ল্যাপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের পরপর ৩ বার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়, রাজনৈতিক প্রভাব ও বিপ্লব বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ এলাকা সাধারণ মানুষ।


তবে বিপ্লব এসব অভিযোগকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেই দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘নেতা হতে গেলে তো অনেক কিছু অনেক জনে বলে।’

স্থানীয় শ্রমিক ও সাধারণ মানুষেরা অভিযোগ করেছেন, ঢাকা-গাইবান্ধা-চট্টগ্রাম রুটে জান্নাত এন্টারপ্রাইজ নামে ৭টি ও সূর্য এন্টারপ্রাইজ নামে কয়েকটি ডে নাইট কোর্স চলে বিপ্লবের। গাড়িগুলোকে যাত্রী পরিবহণের পাশাপাশি মাদক চোরাচালানের মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন বিপ্লব। গাড়িগুলোর অতিরিক্ত টায়ার কাজে লাগিয়ে মায়ানমার থেকে পাচার হওয়া ইয়াবা উত্তরবঙ্গের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করে থাকেন তিনি। এছাড়াও গাড়িগুলোতে করে বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ডের মদ সরবরাহ করে থাকেন বিপ্লব।

এলাকার একাধিক বিজ্ঞজনরা অভিযোগ করেন, মাদক সেবনসহ দেশব্যাপী মাদক ব্যবসার তালিকা ভুক্ত একটি নাম বিপ্লব প্রধান। পলাশবাড়ী থানায় খুন, ধর্ষণ ও মাদক মামলা আসামী এবং চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারিদের মূল উৎস হিসেবে নেতৃত্ব দেন বিপ্লব। নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে এসব অপকর্ম করে থাকেন বিপ্লব।

অভিযোগ উঠেছে, বিপ্লব বাহিনী দুলা মিয়া ও হালিম মিয়ার ৫ শতাংশ জমি স্থানীয় প্রভার খাটিয়ে দখলে নিয়েছে। এ ঘটনার পর জমির মালিক দুলা মিয়া কোর্টে একটি মামলা করেন এবং কোট এতে স্থগিতাদেশ দেন। এছাড়াও নিজস্ব বাহিনী কাজে লাগিয়ে পলাশবাড়ীর কালীবাড়ি হাট ইজারাদারকে জিম্মি করে নিজস্ব লোক দিয়ে পরিচালনা করে আসছেন বিপ্লব। অবৈধ চোরাচালন, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও দখলবাজী কাজে লাগিয়ে বেশ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন বিপ্লব। রয়েছে কয়েকটি ফ্লাটসহ বিলাসবহুল ৫তলা বাড়ি।

এদিকে বিপ্লব বিভিন্ন সময় পলাশবাড়ী থানার কয়েকজন ইউএনও, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে করা মামলা স্থানীয় থানায় চলমান রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছে, ২০১৩ সালেই ৮ শতাংশ জমি বিক্রি করে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। এরপর মাত্র ৬/৭ বছরেরই কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। বিপ্লবের মূল আয়ের উৎস চাঁদাবাজি, পুকুর খনন, পুকুর ভরাট, জুয়া ও মাদক ব্যবসা, দাদন ব্যবসায়ীদের নিকট মাসিক চাঁদা, জমি দখল। এছাড়াও কেউ প্রতিবাদ করতে চাইলে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন বিপ্লব।

এ বিষয়ে গোলাম সারোয়ার প্রধান বিপ্লব বলেন, আমার প্রতি মাদক, চাঁদাবাজিসহ যত অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ আসছে দিনে আমি পলাশবাড়ী পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করতে চাই।

তার সম্পদের উৎস জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পারিবারিকভাবেই এখানে প্রভাবশালী। আমার বাবা দাদাদের অনেক অর্থ ছিল। এছাড়া আমার নিজের ব্যবসা আছে। আর আমি গাড়িগুলো কিনেছি ধীরে ধীরে। ব্যাংক ‍থেকে ঋণ নিয়েছি। আমার এখনো ব্যাংক ঋণ রয়েছে। আমার সেগুলো থেকে যে অর্থ আসে তাতে আমাকে অবৈধ টাকার দিকে তাকাতে হয় না।

ইউএনওকে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে দুইজন ইউএনওর একটি সমস্যা হয়েছিল। এর মধ্যে একজন ইউএনও শহীদ মিনার অবমাননা করলে আমি তার প্রতিবাদ করেছি। এরপর একজন অসহায় মানুষকে চাকরী দেওয়া নামে কিছু টাকা আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন আরেক ইউএনও। আমি সেটা উদ্ধার করে দিতে গিয়ে অপবাদের শিকার হয়েছি। এছাড়া আমি আর কারও সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেছি বলে আমার জানা নেই।

অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও.সি) মাসুদার রহমান মাসুদদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার (এস.পি) মুহাম্মদ তহিদুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে তার বিষয়ে কোন তথ্য নেই। আমি কিছু জানি না। প্রয়োজন হলে আপনারা তদন্ত করে দেখতে পারেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com