অবৈধ এমএলএম ব্যবসায়ীরা সক্রিয়
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেডের আড়ালে পরিচালিত অবৈধ পিরামিড আকৃতির মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার হোতাদের গ্রেপ্তারের পরও থেমে নেই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেইসবুকে সক্রিয় রয়েছে তারা। সেখানে প্রচার করা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের এমডি ও সিইও আলামিন প্রধানসহ গ্রেপ্তাররা দ্রুতই জামিনে বের হয়ে ফের ব্যবসা শুরু করবেন। একইসঙ্গে তাদের মুক্তির দাবিতে দেশের ৬৪টি জেলায় আন্দোলনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। এর আগে তাদের মুক্তির দাবিতে গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় মানববন্ধনেরও ডাক দেওয়া হয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় মানববন্ধন করেনি তারা।
এদিকে বেশ কিছু কর্মী সক্রিয় থাকলেও আত্মগোপনে চলে গেছেন প্রতিষ্ঠানটির লভ্যাংশভোগী উচ্চপদের অন্তত ২০ জন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চক্রের হোতা আলামিন প্রধান ও তার স্ত্রীর আরও কিছু ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে সেসব হিসাবের লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অ্যাপস বন্ধ করার পাশাপাশি অর্থ লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত বিকাশ, রকেট ও নগদ অ্যাকাউন্টও আদালতের নির্দেশে বন্ধ করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসপিসির নিম্নমানের খাদ্য গুদাম ও কারখানার সন্ধান পেয়েছেন তারা। পিরামিডসদৃশ বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনাকারী এমএলএম ব্যবসা বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এখনো অনলাইনে সক্রিয় এসপিসি : এসপিসির একাধিক ফেইসবুক পেজ ও ইউটিউব সক্রিয় রয়েছে। সেখানে সদস্যদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। গতকাল এসপিসির বিভিন্ন ফেইসবুক পেজে পোস্ট করা হয়, ‘এসপিসি কারোর থেকে একটি টাকাও মেরে খায়নি। বরং পেয়েছিল লাখ লাখ বেকার কর্মসংস্থান।’ আরেক পোস্টে বলা হয়, ‘আমরা কেউ হতাশ হব না, কেননা কিছুদিন আগে ইভ্যালির রাসেল ভাইকেও ২ হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে, অনেকে ভেবেছিলেন তা বন্ধ হয়ে যাবে, তবে তারা তাদের প্রুফ দিয়ে এক মাস পরে আবারও আগের স্থানে ফিরে এসেছে. আমরাও আমাদের কোম্পানির ব্যাপারে আশাবাদী। কেউ হতাশ হবেন না, গুজব ছড়াবেন না এবং কান দেবেন না।’ অন্য আরেকটি পোস্টে বলা হয়, ‘মাত্র ১০ মাসে ২২ লাখ ভালোবাসার পরিবার এসপিসি। এসপিসির প্রতি কোনো গ্রাহকের বিন্দুমাত্র অভিযোগ নেই, তাহলে এই ষড়যন্ত্র কেন? সবাই ধৈর্য ধরুন…নিউজ দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। নতুন পলিসিতে এসপিসি ফিরে আসবে ইনশাআল্লাহ।’
এসপিসির গুদাম ও কারখানায় অভিযান : রাজধানীর হাজারীবাগে এসপিসির একটি গুদামের সন্ধান পায় ডিবি। গত রবিবার সেখানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের সয়াবিন তেল, সাবান ও ফেসওয়াশসহ অন্যান্য পণ্য পায়। ডিবি জানায়, সেখানে খোলা তেল প্যাকেটে ভরে উচ্চমূল্য তালিকা লাগিয়ে রাখা হচ্ছে। এছাড়া গাজীপুর ও মুগদায় প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকটি কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে নিম্নমানের পণ্য উৎপাদনের পর নামিদামি ব্রাণ্ডের মোড়ক লাগানো হয়।
এসব বিষয়ে ডিবির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. নাজমুল হক বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে আলামিনের ৮টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেলেও তদন্তে আরও কিছু ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। তার স্ত্রীর নামেও সিটি ও ইসলামী ব্যাংকে হিসাব খোলা আছে। তার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে মোট কতগুলো ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে এবং মোট কত টাকা ট্রানজেকশন হয়েছে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়া এসপিসির গোডাউন ও কারখানায় অভিযান চালিয়ে নিম্নমানের পণ্য পাওয়া গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেডের কিছু কর্মী সারা দেশে আন্দোলনের চেষ্টা করছেন। এদের বেশি কর্মী রয়েছে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও গাজীপুরে। এরইমধ্যে গাজীপুরে তারা মানববন্ধন করেছেন। আমরা তাদের নজরদারিতে রেখেছি।’
গত ২৬ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ই-কমার্সের আড়ালে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগে আলামিন প্রধানসহ এ চক্রের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম) বিভাগের (ডিবি) অর্গানাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন টিম। এসপিসি গত ১০ মাসে ২২ লাখ সদস্য সংগ্রহ করে তাদের থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানায় ডিবি। এ ঘটনায় রাজধানীর কলাবাগান থানায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আলামিনের ৪ দিনের রিমান্ড গতকাল শেষ হয়েছে। জসীমের তিন দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল আরও এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।