যে কারণে দল বদলাতে চেয়েছিলেন বাদল
সারাজীবন বাম রাজনীতি করে আসা মাঈনউদ্দিন খান বাদল দল বদল করতে চেয়েছিলেন। সেটি তার ব্যক্তিস্বার্থে নয়, একটি সেতুর জন্য। সেই কালুরঘাট সেতুই দেখে যেতে পারেননি বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।
জাসদের কার্যকরী সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদল বলেছিলেন, ‘এই শেষ জীবনে আমার আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। প্রেমের টানে মানুষ জাত-কূল-মান বিসর্জন দেয়। আমি এবার জনগণের প্রেম রক্ষায় নিজের জাত ছেড়ে প্রয়োজনে আওয়ামী লীগে যাব। সেতু ছাড়া আমার আর কিছুই চাই না।’
কালুরঘাট সেতু না হওয়ায় আক্ষেপ করে গত ৯ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে কালুরঘাট সড়ক-কাম রেল সেতু নির্মাণের দাবিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কথাগুলো বলেছিলেন তিনি।
বাদল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে করজোড়ে বলেছি, প্রতিদিন ৫০ হাজার মানুষ আমার মাকে গালি দেয়। আল্লাহর ওয়াস্তে আপনি ব্রিজটা করে দেন।’
কালুরঘাট সেতুর জন্য প্রয়োজনে নিজের চিরজীবনের রাজনৈতিক আদর্শ পাল্টে প্রয়োজনে আওয়ামী লীগে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন বাদল। ‘আমি সরকারি জোটের এমপি ব্রিজের জন্য যদি আমাকে আওয়ামী লীগ করতে হয়, প্রয়োজনে সেটিও করতে রাজি। … প্রধানমন্ত্রীকে করজোড়ে বলেছি, প্রতিদিন ৫০ হাজার মানুষ আমার মাকে গালি দেয়। আল্লাহর ওয়াস্তে আপনি ব্রিজটা করে দেন।’
এমপি বাদল বলেছিলেন, ‘আমার জীবদ্দশায় কালুরঘাট সড়ক-কাম রেল সেতুটির বাস্তবায়ন দেখে যেতে চাই। এ সেতুর জন্য আমি আমার ‘সবেধন নীলমণি’ রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি এমপি পদ থেকে অব্যাহতি নেয়ার কথা পর্যন্ত বলেছি। আমার দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর জন্য আমি তো আর কিছু চাইনি।’
ডিসেম্বরের মধ্যে কালুরঘাত সেতু না হলে পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছিলেন বাদল, ‘কালুরঘাট নতুন সেতুটির জন্য আমি এলাকায় মুখ দেখাতে পারি না। মানুষ আমার মরা মা তুলে গালি দেন। আমি এটি আর সহ্য করব না। যদি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কালুরঘাট সেতুর কোনো সুরাহা না হয়, তা হলে আমি এ সংসদ থেকে পদত্যাগ করব।’
ওই অনুষ্ঠানে বাদল স্বভাবসুলভ চাটগাইয়্যা ভাষায় বলেছিলেন- ‘ডিসেম্বরের মধ্যে কিছু ন গইল্ল্যে আই যাইয়ুম গুই’ (অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যে যদি কিছু না হয়, তা হলে আমি চলে যাব)।
এই মুক্তিযোদ্ধা তার কথা রেখেছেন! তবে পদত্যাগ করতে হয়নি তাকে। কালুরঘাট সেতু নিয়ে সরকারি ঘোষণা আসার আগেই শুধু সংসদ থেকেই নয়, চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
এর আগেও ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রামে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলেন। সেতুর সুরাহা না হলে সংসদ থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত না পাওয়া সেতুর সেই বেদনা নিয়েই সবার মাঝ থেকে চলে গেলেন সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মাঈনউদ্দীন খান বাদল।
বৃহস্পতিবার ভোরে বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৬৭ বছর বয়সী এ রাজনীতিক।
মৃত্যুর পর বাদলের এই ‘শেষ ইচ্ছা’র কথা চট্টগ্রামে তার রাজনৈতিক বন্ধু-প্রতিপক্ষ এমনকি সাধারণ মানুষের আলোচনায়।
বন্ধুর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, শেষ একটা ইচ্ছা ছিল তার- কালুরঘাট সেতু। উনিই আমাকে এটার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী আমার সামনে বলেছেন- আপনার ব্রিজ আমি করে দেব। ইনশাল্লাহ্ ব্রিজ হবে। বাদল ব্রিজের জন্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিল। ব্রিজের কাজ করতে করতে সে দুনিয়া থেকে চলে গেল।’