আমি কারও পক্ষে-বিপক্ষে নই, আমি আপামর মানুষের স্বার্থে কথা বলি: ইলিয়াস কাঞ্চন
নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, নিরাপদ সড়ক আইনটিতে কাউকে এককভাবে দায়ী বা টার্গেট করা হয়নি। বিশেষ করে চালকশ্রেণিকে তো নয়ই। বরং আইনটিতে চালকদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, নিয়োগপত্রসহ গাড়ি চালনায় সঠিক পরিবেশ তৈরির কথা আছে। তবু কেন আইন বাস্তবায়নে বাধা দেওয়া হচ্ছে, তবু কেন চালকদের বিরোধিতা, আইন না মানার মানসিকতা—প্রশ্ন ইলিয়াস কাঞ্চনের।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের দাবিতে নিসচা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমি কারও পক্ষে-বিপক্ষে নই। আমি আপামর মানুষের স্বার্থে কথা বলি। বাস-ট্রাকচালক, যাত্রী, রিকশাচালক, পথচারী, ব্যক্তিগত গাড়িচালক সবাই সড়কে আইন মানলে দুর্ঘটনা ঘটবে না। একজনের জন্য অন্যজন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘এরপরও আমার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। কিছু শ্রমিকনেতার ভুল বোঝানোর কারণে চালকেরা ধরে নেন, আমি তাঁদের বিপক্ষে কথা বলছি। এটা দুঃখজনক, ভুল-বোঝাবুঝি।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, করোনাকালে ফাঁকা সড়কেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর কারণ, নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানোর অভ্যাস।
ইলিয়াস কাঞ্চন অভিযোগ করে প্রশ্ন তোলেন, সারা বছর শ্রমিকদের ব্যবহার করে শ্রমিকনেতারা যে ফায়দা নেন, কোটি কোটি টাকা শ্রমিকদের কল্যাণের নামে যে চাঁদাবাজি চলে, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নামে, সেই টাকার কত অংশ করোনারকালে শ্রমিকদের জন্য ব্যয় করা হয়েছে? শ্রমিকদের সুরক্ষায় এই টাকা ব্যবহার করা হয় না।
নিরাপদ সড়ক আইনের বিধিমালা প্রণয়ন জরুরি বলে উল্লেখ করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তাঁর অভিযোগ, এই আইন বাস্তবায়নে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অংশীজনদের মধ্যে শৈথিল্য রয়েছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা, বিশেষ মহলের চাপ ও দ্রুত বিধিমালা না হলে দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ ও এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে। আর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল ও পরিবারের কান্না চলতেই থাকবে।
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, ‘এবারের ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠানে অনেক পরিবহনশ্রমিকনেতাকে দেখা যায়নি। গণমাধ্যমে দেখেছি, আমার উপস্থিতির জন্য তাঁরা সেখানে যাননি। তাঁরা বলেন, আমি নাকি চালকদের বিপক্ষে কথা বলি, সাজা বাড়ানোর কথা বলি। এটা মিথ্যা। সব অংশীজনের মতামত নিয়ে আইনটি করা হয়েছে। মতপ্রকাশে আমিও একজন অংশীজন ছিলাম। আরও অনেক অংশীজন ছিলেন। তাঁদের বিষয়ে চালকেরা কথা বলেন না।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে নিসচার ভাইস চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন হয়েছে। এরপর আইনটি করা হলো। তবু এ দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য, নিরাপদ সড়ক আইনটি এখনো বাস্তবায়ন হলো না। আইনটি জনগণের স্বার্থে দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
নিসচার ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুজ্জামান, যুগ্ম মহাসচিব লিটন এরশাদ প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।