‘ছেলেকে মেরেছে, আমাকেও গুলি করে মারা হোক’
‘আমার বুকের ধন একমাত্র ছেলেকে কেড়ে নিয়েছে এই ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এসআই আকবর ও তার সহযোগীরা। বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন করে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তারা।হত্যাকারী এসআই আকবর ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার চাই। আর না হয়, আমি ফাঁড়ির সামনে থেকে যাবো না। আমার ছেলেকে মেরেছে, আমাকেও গুলি করে মারা হোক। ’
রোববার (২৫ অক্টোবর) বেলা১১ টা থেকে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে আমরণ অনশনে বসেন পুলিশি নির্যাতনে নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম ও তার স্বজনরা।
এসময় ছেলের ‘হত্যাকারী’ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইযার গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি জানিয়ে একথা বলেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলের হত্যাকারী এসআই আকবর ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আমি এখানেই অবস্থান করবো। এই কর্মসূচী কোনো দলীয় কর্মসূচী নয়। তাই দলমত নির্বিশেষে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার বুকের ধন একমাত্র ছেলেকে কেড়ে নিয়েছে এই ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এসআই আকবর ও তার সহযোগীরা। বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন করে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তারা। আমি এই হত্যাকারীদের বিচার চাই। আর না হয়, আমার ছেলেকে মেরেছে, আমাকেও গুলি করে মারা হোক।
তিনি বলেন, আমার ছেলের হত্যাকারী এসআই আকবরকে না ধরা পর্যন্ত আমি এখানেই অবস্থান করবো। এই কর্মসূচি কোনো দলীয় কর্মসূচি নয়। তাই দলমত নির্বিশেষে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
আকবরের সালমা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে এই ফাঁড়িতে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার আজ ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও এসআই আকবরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। একই সঙ্গে পুলিশ হেফাজতে থাকা আকবরের সহযোগীদেরও গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, এসআই আকবর ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।
রায়হান হত্যার ঘটনায় ব্যবসায়ীরাও রাজপথে আন্দোলনে নেমেছেন। তারা নগরের কোর্ট পয়েন্টে কর্মসূচি দিলেও পরবর্তীসময়ে রায়হানের মায়ের করা অনশনে এসে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে রেখে রায়হান হত্যার মূল হোতা এসআই আকবর ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার দাবি জানান।
গত ১১ অক্টোবর ভোররাতে রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করা হয়। পরে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।
রায়হান ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন, পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হলেও নিহতের পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ ছিল, পুলিশ ধরে নিয়ে ফাঁড়িতে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরিবারের অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্ত দল ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর সত্যতা পেয়ে জড়িত থাকায় ইনচার্জ আকবরসহ চার পুলিশকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করেন।
বরখাস্তরা হলেন- বন্দরবাজার ফাঁড়ির কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস। প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন। তবে ঘটনার পর অন্য ছয়জন পুলিশ হেফাজতে থাকলেও আকবর পলাতক রয়েছেন।
পরবর্তীতে মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ তদন্ত করছে পিবিআই। গত ১৪ অক্টোবর তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। গত ১৫ অক্টোবর মরদেহ কবর থেকে তোলে পুনঃময়না তদন্ত করে পিবিআই।
নির্যাতনে নিহত রায়হান উদ্দিনের ১১১ আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ফরেনসিক রিপোর্টে। আর অতিরিক্ত আঘাতের কারণে দেহের ভেতর রগ ফেটে গিয়ে রক্তক্ষণে রোববার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় গত সোমবার (১৯ অক্টোবর) আদালতে ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দেন তিন পুলিশ সদস্য সাইফুল, দেলোয়ার ও শামীম। গত ২০ অক্টোবর পুলিশ লাইনে বরখাস্ত থাকা কনস্টেবল টিটুকে গ্রেফতার দেখিয়ে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।
তবে ঘটনার মূলহোতা সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া এখনো পলাতক রয়েছেন।