বৈদেশিক বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলো ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ: টিআইবি
বিদেশে ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য সহযোগী শীর্ষস্থানীয় দেশসমূহের অব্যাহত ও হতাশাজনক ব্যর্থতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মঙ্গলবার প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) গবেষণা প্রতিবেদন ‘দুর্নীতি রফতানি’-এর (Exporting Corruption) তথ্য উল্লেখ করে, উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা অর্থ পাচারসহ নানা ধরণের ক্ষতি ও ঝুঁকির বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকার তাগিদ জানিয়েছে টিআইবি।
পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্য সহযোগী রাষ্ট্রগুলোকে তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, নিজস্ব আইন ও তার প্রয়োগ শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটি খুব হতাশাজনক যে, বিশ্বের শীর্ষ রফতানিকারক দেশগুলো বিদেশে ঘুষ লেনদেন বন্ধের বিষয়ে তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি পালনে আশঙ্কাজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ দেশগুলোর তালিকায় সবচেয়ে দূর্বল অবস্থানে রয়েছে চীন, জাপান, ভারত, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ড, কানাডা ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলো।
এদেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশ আবার বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগী। তাই বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতিবিরোধী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সরকারসহ বৈদেশিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ ও অন্যান্য সকল অংশীজনদের সতর্ক করছি।
অন্যদিকে যেসব দেশ জাতিসঙ্ঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন (UNCAC) এবং ওইসিডির (OECD) ঘুষবিরোধী কনভেনশন অনুযায়ী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাদের কূটনৈতিক মিশন ও অন্যান্য প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমরা বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের বিষয়ে জি-২০-এর অন্তর্ভূক্ত দেশসমূহের অর্ধেক আশঙ্কাজনকভাবে দূর্বল অবস্থানে রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, বিশ্বের শীর্ষ রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে খুব স্বল্পসংখ্যক বিদেশে ঘুষ লেনদেনকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
বার্লিনে অবিস্থিত টিআই সচিবালয় পরিচালিত দ্বিবার্ষিক ‘দুর্নীতি রফতানি ২০২০ : ওইসিডি ঘুষবিরোধী কনভেনশন প্রয়োগের মূল্যায়ন’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৮ সালের পর থেকে বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে সক্রিয় আইন প্রয়োগের উদহারণ আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এসময়কালে বৈদেশিক ঘুষ ও এর সাথে সম্পৃক্ত অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া শীর্ষ রফতানিরক দেশের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশেরও বেশি কমেছে।
গবেষণায় অর্ন্তভূক্ত ৪৭টি দেশের মধ্যে বিশ্বের রফতানি বাণিজ্যের ১৬ দশমিক পাঁচ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করা মাত্র চারটি দেশ বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে আইন প্রয়োগ করেছে। অথচ ২০১৮ সালে এমন দেশের সংখ্যা ছিলো সাতটি, যারা মোট বৈশিক রফতানি বাণিজ্যের ২৭ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করতো। বাস্তবিকভাবে ৪৭টি দেশের মধ্যে ৩৪টি দেশ কার্যত এ সংক্রান্ত আইনের কোনো প্রয়োগ করেনি।
প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা এমনিতে সর্বব্যাপী দুর্নীতির চক্রে আষ্টেপৃষ্ঠে আবদ্ধ। এই প্রেক্ষিতে বিদেশী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি চর্চার পরিস্থিতিকে আরো প্রকট করে তুলবে।
বিশেষ করে যখন বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আকর্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকার ও অন্যান্য অংশীজনদের জন্য যে কোনো বিদেশী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সাথে সব ধরণের ব্যবসা ও বিনিয়োগ কার্যক্রমে দুর্নীতিবিরোধী চর্চাসমূহকে জোরালোভাবে মূলধারাভূক্ত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, জাতিসঙ্ঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের অন্যতম অংশীদার হিসেবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ।