অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে সাজা দিতে হবে
সম্প্রতি খুন, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের মাত্রা বেড়েছে। সর্বশেষ এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে গণধর্ষণের ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে সর্বত্র। বিশিষ্টজন ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে বিচার করা সম্ভব
হলেই এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। তাদের মতে, অপরাধী কোন সংগঠনের সেটা দেখার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তাদের মধ্যে একটি অপরাধী চক্র গড়ে উঠেছে। তারা যেহেতু ক্ষমতায়। এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত এই সংগঠন। এই সংগঠনের ছত্রছায়ায় থেকে অপরাধ করাটা সহজ।
কারণ অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। তারা হয়তো বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে। সেই জায়গায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে শক্তভাবে মনিটরিং বা নজরদারির কাজটি করতে হবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, অপরাধীর পরিচয় সে একজন অপরাধী। সে যে কোনো সংগঠনের হোক না কেন। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ইতিমধ্যে অপরাধীদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে। এখন বিচার যেন তাড়াতাড়ি হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা (বিচার) না ঝুলিয়ে রেখে ত্বরিত গতিতে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এবং সরকার পক্ষের আইনজীবীরা কালক্ষেপণ না করে তাড়াতাড়ি যেন মামলাটি শেষ করেন। আমাদের দেশে অসুবিধা হলো মামলা সহজে শেষ হতে চায় না। এ জন্য মামলার বাদীপক্ষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই মামলা করার পরের দিন তদন্ত শেষে সঙ্গে সঙ্গে চার্জশিট দিতে হবে। মামলা একবার শুরু হলে কোনোরকমের মুলতবি দেয়া যাবে না। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে সমাজে এ সমস্ত যে অপকর্ম হচ্ছে সেটা বন্ধ হবে। অন্যথায় অপরাধী পার পেয়ে গেলে অপরাধ চলতেই থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, একজন সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে মনে করি এগুলো একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। আমাদের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে এবং এখানে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ডেভেলপ না করাই এর মূল কারণ। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান মানে হচ্ছে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দল চলবে। এবং এই প্রক্রিয়ায় যার ডেডিকেশন আছে যোগ্যতার ভিত্তিতে সেই স্থান দখল করবে। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের এখানে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তাতে যখন যে ক্ষমতায় আসে তার যে ছাত্র বা যুব সংগঠন তাদের একধরনের ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতিফলন দেখা যায়।
তিনি বলেন, দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু হলে যিনি ভালো কাজ করবেন তাকে পুরস্কৃত করা এবং খারাপ কাজের জন্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্য দিয়েই একটি দেশের উন্নয়নও নির্ভর করে। সন্দেহ নেই এটা দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি। তবে আশার কথা হচ্ছে বর্তমান সরকার তার দলের লোকদেরও শাস্তি নিশ্চিত করছেন। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেছেন, যেহেতু তারা ক্ষমতাসীন। ফলে তারা মনে করে তাদের অবাধ স্বাধীনতা আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান কিছু করতে পারবে না। বা রাজনৈতিক প্রভাব দ্বারা তারা সব সময় স্বাধীন এবং মুক্ত থাকবে। তাদের কার্য তারা যেভাবে চায় সেভাবে এগিয়ে নেবে। মূল কথা হচ্ছে এখানে আইনের শাসন নেই। সে কারণে তারা সাহস পায়। আইনের শাসন থাকলে তারা সাহস পেতো না। দেশে এসিড নিক্ষেপের প্রবণতা কমে গেছে। কারণ, তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া এবং নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা ছিল। এখানে যেহেতু নেই তাই তারা সাহস পাচ্ছে এবং করে যাচ্ছে। মূল কথা আইনের শাসন নেই। এবং রাজনৈতিক ভরসায় তারা এটা করে থাকে।