পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিশেষ তহবিলের সুদ কমলো
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিলের সুদহার কমানো হলো। এখন ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা যাবে। এ জন্য প্রতি ১০০ টাকায় ব্যয় করতে হবে পৌনে ৫ শতাংশ। আগে ছিল ৫ শতাংশ। পাশাপাশি ভালো কোম্পানির বন্ডেও লেনদেন বাড়াতে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। ভালো কোম্পানির বন্ডেও বিনিয়োগ বাড়াতে সুদহারে ছাড় দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ১৭টি ব্যাংক এক হাজার ৭৪২ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ছিল, ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করবে। আর এ ২০০ কোটি টাকার তহবিল প্রভিশনের আওতামুক্ত থাকবে। এমনকি ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমারও বাইরে থাকবে। অর্থাৎ একটি ব্যাংক তাদের মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। আর এ ২০০ কোটি টাকা ওই ২৫ শতাংশের আওতামুক্ত থাকবে। ব্যাংকগুলো ইচ্ছে করলে তাদের নিজস্ব উৎস থেকে তহবিল গঠন করতে পারে। আবার তাদের হাতে থাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কম সুদে ধারও নিতে পারবে। কেউ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিলে সুদ পরিশোধ করতে হবে মাত্র ৫ শতাংশ হারে। আর এ তহবিল গঠন করতে পারবে দীর্ঘ ৫ বছরের জন্য। এ সময়ের মধ্যে এ তহবিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা প্রয়োগ করা হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথমে পাঁচটি ব্যাংক তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করে। পরে ধাপে ধাপে তহবিলের আকার বাড়তে থাকে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, এ পর্যন্ত ১৭টি ব্যাংক এক হাজার ৭৪২ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। এর মধ্যে ইতোমধ্যে ৫০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।
এ দিকে, আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, পুঁজিবাজারে করপোরেট বন্ডের বিনিয়োগ বাড়াতে সুদহারের ন্যূনতম সীমা ১০ শতাংশ বেঁধে দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ যেসব কোম্পানির বন্ডের সুদহার ১০ শতাংশের নিচে ওই সব কোম্পানির বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারত না ব্যাংক। এখন ভালো কোম্পানির বন্ডে বিনিয়োগ বাড়াতে বলা হয়েছে, কোনো ভালো কোম্পানি বন্ড ছাড়লে সুদহার ১০ শতাংশের নিচে হলেও ব্যাংক বিনিয়োগ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে সুদহার হবে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহারের সাথে অতিরিক্ত ১ শতাংশ। বর্তমান ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার রয়েছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। সে হিসাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ভালো কোম্পানিগুলোর বন্ডের সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশ থাকবে। একই সাথে যেসব বন্ডের বিপরীতে সম্পদ রয়েছে ওই সব বন্ডের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে তারল্যপ্রবাহ বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে ধার নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়; কিন্তু এটা ব্যাংকগুলোর জন্য ইতিবাচক না হওয়ায় সর্বশেষ বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র আশা করছে, এর ফলে ব্যাংকগুলো প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে পারবে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারে তারল্যসঙ্কট কেটে যাবে।