বাবরের মুক্তির অপেক্ষায় হাওরপাড়ের লাখো মানুষ

0

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের তিনটি উপজেলা মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও মদন। এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১৬০ নম্বর ও নেত্রকোনা-৪ আসন। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তিনি শুধু একজন সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রীই নন, হাওরবেষ্টিত জনপদের সাধারণ মানুষের কাছে তিনি একজন জনদরদি, দানবীর ও তুমুল জনপ্রিয় নেতা হিসেবে সুপরিচিত।

তবে ২০০৭ সাল থেকে কারাবন্দি অবস্থায় আছেন লুৎফুজ্জামান বাবর। এরই মধ্যে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকল মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি। তার মুক্তিতে এখন আর কোনও বাধা নেই। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা শহরে আনন্দ মিছিল করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। আনন্দ মিছিল হয়েছে বাবরের নিজ উপজেলা মদন ও কেন্দুয়াতেও। কোথাও কোথাও করা হয়েছে মিষ্টি বিতরণ।

কারান্তরীণ লুৎফুজ্জামান বাবরকে বরণ করে নিতে অধীর আগ্রহে রয়েছেন হাওরপাড়ের লাখো মানুষ। তারা তাদের প্রিয় নেতার মুক্তির অপেক্ষায় ক্ষণ গণনা শুরু করে দিয়েছেন।

এদিকে, লুৎফুজ্জামান বাবরের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে তার নিজ উপজেলা মদন, জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে মিছিল-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছিল। এসব কর্মসূচিতে বাবরপ্রেমী সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো।

স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লুৎফুজ্জামান বাবর সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তিনি নিজ নির্বাচনি এলাকা মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলাসহ জেলার সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। যে কারণে তিনি পুরো জেলাবাসীর কাছে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই আস্থাভাজন ও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পেরেছিলেন।

নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার ভাটিবাংলার জননন্দিত নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরকে নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। দীর্ঘ সতেরো বছর পর স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। তাই আমরা আর বাবরকে জেলে দেখতে চাই না। অনতিবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে আসছিলাম।’

জেলার মদন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রিয় নেতাকে বরণের জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। লুৎফুজ্জামান বাবরের মতো একজন খাঁটি জনদরদি নেতা বর্তমানে বিরল। তিনি যেদিন জেল থেকে বের হয়ে আসবেন, সেদিন তাকে বরণ করতে হাওরাঞ্চল জনসমুদ্রে পরিণত হবে। তিনি কারামুক্ত হয়ে আবারও এলাকার সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে হাল ধরবেন—এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

জেলার মদন উপজেলার নায়েকপুর গ্রামের বাবরভক্ত আব্দুল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের মতো গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে তিনি অত্যন্ত মূল্যায়ন করতেন। দলমত নির্বিশেষে তিনি সকলেরই কথা শুনতেন। তার কাছে গিয়ে কাউকে কোনোদিন খালি হাতে ফিরে আসতে হয়নি। তার সময়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তাই তিনি সাধারণ মানুষের প্রিয় নেতা। এমন একজন জনদরদি মানুষকে আমরা আর জেলে দেখতে চাই না। তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক।’

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, লুৎফুজ্জামান বাবর ১৯৫৮ সালের ১০ অক্টোবর নেত্রকোনার হাওরবেষ্টিত মদন উপজেলার বাড়িভাদেরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা এ কে লুৎফর রহমান ও মা জোবায়দা রহমান। বাবা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর মা-বাবার তৃতীয় সন্তান। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯৬ সালে এবং ২০০১ সালে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি তৎকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ২০০৭ সাল থেকে গ্রেনেড হামলা মামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জেলে আছেন লুৎফুজ্জামান বাবর। তবে এরই মধ্যে তিনি গ্রেনেড হামলা মামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ সব মামলা থেকেই বেকসুর খালাস পেয়েছেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে এখন শুধু কারামুক্ত হওয়ার অপেক্ষা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com