দিল্লির চোখে বাংলাদেশকে দেখে না যুক্তরাষ্ট্র
ওয়াশিংটন আয়োজিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বিষয়ক এক ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিক রিলেশনশিপ’ এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী মন্ত্রী লরা স্টোন। ঢাকা থেকে যুক্ত ছিলেন ডেপুটি চিফ অব মিশন জোয়েন ওয়াগনার। ব্রিফিংয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে কেন বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা তাৎপর্যপূর্ণ? সেই প্রশ্নের জবাবও দেন তারা। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধনকে আরো জোরদার করার প্রয়াসে ওয়াশিংটন ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে- জনমনের এমন পারসেপশন বা ধারণা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন উপ-সহকারী মন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খুবই বিস্তৃত এবং গভীর। দিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটনের বহুমুখী সম্পৃক্ততা রয়েছে। দেশ দু’টির বোঝাপড়া অনেক দিনের। তাদের বিস্তৃত এনগেজমেন্ট রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত বা অন্য দেশের কী সম্পর্ক- তা ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব একটা বিবেচ্য নয়।
মার্কিন মন্ত্রী খোলাসা করে না বললেও তিনি এটাই ইঙ্গিত করেন যে, দিল্লি বা অন্য কারও চোখে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দেখে না বরং যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব চিন্তা এবং বিবেচনা থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। আয়তনে ছোট বা বড় দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধন বা সম্পর্কে তারতম্য হয়, বাংলাদেশকে মারজিনালাইজভাবে দেখা হয় এমন প্রশ্নও আসে। মার্কিন উপ-সহকারী মন্ত্রী এবং ঢাকায় নিযুক্ত উপ-রাষ্ট্রদূত উভয়ে এটি খণ্ডন করেন। বলেন, না বাংলাদেশকে আমরা কখনও ছোট দেশ বা মার্জিনালাইজড ভাবি না। কারণ বাংলাদেশ জনসংখ্যার বিচারে অষ্টম অবস্থানে। তার স্থিতিশীল অর্থনীতি তো বটেই, ক্রম উন্নতির ধারাও অব্যাহত রয়েছে। মার্কিন ফরেন পলিসিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব সব সময়ই ছিল এবং এখনও আছে। ঢাকাস্থ উপ-রাষ্ট্রদূত নিজের প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে পোস্টিংয়ের জন্য তার মতো অনেকের আকাঙ্খা রয়েছে। বাংলাদেশের গুরুত্ব এবং দেশটির প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি এখানে এসেছেন। ইন্দো-প্যাসিফিট স্ট্র্যাটেজির টার্গেট কি এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ? এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন উপ-সহকারী মন্ত্রী বলেন, কাউকে নিয়ন্ত্রণের টার্গেটে তারা কোনো স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল গ্রহণ করেন না। এটিও তেমনি একটি অবাধ এবং উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। এতে যুক্ত সব রাষ্ট্রই সমৃদ্ধ হবে, উন্নয়নের অংশীদার হতে পারবে। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তেমন মাথাব্যথা নেই বলেও জানান তারা। বরং তার নিজেদের বিনিয়োগ নিয়ে ভাবছেন বলে জানান। বাংলাদেশের যে কোন মানবিক সংকটে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ছিল এবং আছে জানিয়ে উভয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে ৮০০ মিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে। যার বড় অংশ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ব্যয় হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায়ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা রয়েছে। ব্রিফিংয়ে বরাবরের মতো রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলে জানানো হয়। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার জেনারেলদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারিসহ সম্ভাব্য সবকিছু যুক্তরাষ্ট্র করে চলেছে বলে জানানো হয়।