সামাজিক মাধ্যমে অসামাজিকতা কেন?

0

বর্তমানে আমরা বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নত যুগে বসবাস করছি; যে যুগে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইমো, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, লাইকি ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমের অভাব নেই।

ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও হাতে হাতে স্মার্টফোন মানুষকে যেন অতিমাত্রায় এ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ব্যস্ত করে তুলছে। মানুষ এগুলোর মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে কখনও কাজে অথবা কখনও অকাজে।

ধরা যাক, ফেসবুকের কথা, যার জালে আটকে আছি আমরা প্রত্যেকেই। ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট নেই, এমন মানুষের দেখা এখনকার দিনে খুব কমই মেলে।

এ ফেসবুক আমরা কেউ ব্যবহার করে থাকি বিনোদনের জন্য। আবার কেউ ব্যবহার করে থাকি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন কিংবা পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষার্থে। ফেসবুক বিভিন্নভাবে আমাদের উপকার করে- এটা স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু আমাদের কিছু অহেতুক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা দিন দিন এটিকে অসামাজিক ও ব্যক্তিজীবনের জন্য ক্ষতিকর করে তুলছি। ক্রমাগত এটিকে পরিণত করছি নেশায়।

যাতে নষ্ট হচ্ছে আমাদের অনেক মূল্যবান কর্মঘণ্টা। ব্যাঘাত হচ্ছে ঘুমের। পড়াশোনায় পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। কমে যাচ্ছে মানুষের প্রতি মানুষের পারস্পরিক সৌজন্যবোধ, বিশ্বাস আর সামাজিকতা। অন্যদিকে, মধ্যরাত অবধি সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটানো যেন আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, যা নীরবে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে যাচ্ছে।

আবার ফেসবুক ওয়ালে কাউকে পোস্ট, কমেন্ট, রিঅ্যাক্ট, শেয়ার, জন্মদিন কিংবা সফলতায় শুভেচ্ছা, ব্যর্থতায় সমবেদনাযুক্ত পোস্ট দেয়া, না দেয়াসহ আরও অনেক তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে নানা তুলকালাম কাণ্ড। এটি কখনও আবদ্ধ থাকছে ক্ষুদ্র সমস্যায়; আবার কখনও পরিণত হচ্ছে মারামারি, সংঘাত ও রক্তপাতের মতো বৃহৎ ঘটনায়।

আবার কখনও কারও ব্যক্তিগত মনোভাব যুক্ত পোস্ট- কমেন্টকে অমুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রূপক তরজমা করে ঘুরিয়ে দেয়া, ফেক আইডির মাধ্যমে মিথ্যা অভিযোগ, ফেক আইডির মালিক নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস, গুজব, অশালীন মন্তব্য, পক্ষে-বিপক্ষে উসকানি ইত্যাদি বিতর্কিত কার্যকলাপের দরুন মানুষের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে মনোমালিন্য ও হিংসা-বিদ্বেষ।

এর ফলে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব কিংবা সুসম্পর্কের ইতি ঘটছে। ভেঙে যাচ্ছে পরিবার। দাম্পত্য জীবনে তৈরি হচ্ছে কলহ। এমন কী, ভুল বোঝাবুঝিতে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে সমাজ, যা সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পথে চরম হুমকিস্বরূপ। কেননা, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজে দীর্ঘস্থায়ী অশান্তি বিরাজ করে।

সামাজিক মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলোকে আমরা যদি অসামাজিক করে তুলি, তাহলে এগুলোর উপকারের চেয়ে ক্ষতির মাত্রাই আমাদের বেশি ভোগ করতে হবে। সমাজে শান্তি বজায় রাখার জন্য ফেসবুকসহ সব সামাজিক মাধ্যমকে সমাজনির্ভর করে তুলতে হবে। এগুলোর খারাপ দিক বর্জন করে ভালো দিকগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে মিথ্যা অপবাদ, অহেতুক গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, কাজে-অকাজে সময় নষ্ট করাসহ নানা ধরনের অপচয়, অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যক্রম থেকে সামাজিক মাধ্যমগুলোকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখতে হবে। তবেই আমরা এগুলোর সুফল ভোগ করতে পারব, যা একদিকে আমাদের প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সমৃদ্ধ অন্যদিকে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করবে। অন্যথায় এগুলো আমাদের জন্য আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com