শিক্ষকের মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে তদন্ত করার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানের বহিষ্কারের ঘটনাকে আইনবহির্ভূত উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ এবং এই অন্যায্য সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি এ প্রতিবাদ জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী মতপ্রকাশের কারণে কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করা বিশ্ববিদ্যালয়েল এখতিয়ার বহির্ভূত বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী যেসব কারণে একজন শিক্ষকের চাকরি যেতে পারে তার মধ্যে একটি হচ্ছে নৈতিক স্খলন আর অপরটি হচ্ছে শিক্ষক হিসেবে অযোগ্যতা (ধারা ৫৬/৩)। কিন্তু এর কোনোটিই অধ্যাপক মোর্শেদ হাসানের বরখাস্তের অভিযোগ হিসেবে দায়ের করা হয় নাই। উপরে বর্ণিত ঘটনাপ্রবাহে স্পষ্ট যে উনার চাকরিচ্যুতির মূল কারণ হচ্ছে উনার ভিন্ন রাজনৈতিক মত প্রকাশ। অথচ ওই একই আইনের আরেকটি ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের রাজনৈতিক মত থাকা এবং আইনসিদ্ধ দলের অনুসারী হতে কোনো বাধা নেই (ধারা ৫৬/২)। সেই হিসেবে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসানের বিরুদ্ধে তদন্ত করার কোন এখতিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের থাকার কথা নয়। অর্থাৎ অধ্যাপক মোর্শেদ হাসানের চাকরিচ্যুতি বিশ্ববিদ্যালয় আইনবহির্ভূত এবং এটি নিন্দনীয় ঘটনা। এটি শিক্ষকের উপর সংঘটিত এক অন্যায়, অবিচার এবং নিপীড়ন। যে প্রক্রিয়ায় এই কাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে সেটি বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। তাছাড়া এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের একাডেমিক ফ্রিডমের উপরেও বড় আঘাত।
বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষকদের মতপ্রকাশের এমন বাধাদানকে পাকিস্তানী স্টাইলের নিপীড়ন উল্লেখ করার পাশাপাশি বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মতপ্রকাশের বিপরীতে তাদের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ জানানো হয়।
অন্যদিকে শিক্ষকদের অধিকার সুরক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর ভূমিকা না থাকাকে সমালোচনা করে এতে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলো এক ধরনের ছায়া প্রশাসন হিসেবে কাজ করছে। শিক্ষকদের স্বার্থ দেখার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বার্থ রক্ষাই প্রধান কাজ হয়ে যাচ্ছে।
অধ্যাপক মোর্শেদ হাসানের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর উদাহরণ উল্লেখ করে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভবিষ্যতে একই প্রতিহিংসামূলক আচরণের শিকার অন্যান্য শিক্ষকরাও হতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মঙ্গলের জন্য আমরা এই অবস্থার দ্রুত অবসান চাই।
অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে এতে আরো বলা হয়, আমরা মনে করি এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি বেআইনী এবং অন্যায় সিদ্ধান্ত। তাই আমরা এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং শিক্ষককে দ্রæত পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে অন্যান্যের মধ্যে স্বাক্ষর করেন, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সামিনা লুৎফা, আর রাজী, অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ, ড. আসিফ মোহাম্মদ শাহান, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, স্বপন আদনান, রুশাদ ফরিদী প্রমুখ।