এস্ট্রাজেনেকার টিকার পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ, তবে সব শেষ হয়ে যায়নি: লন্ডন টেলিগ্রাফের রিপোর্ট
ব্রিটিশ একজন নারীর বিরল স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দেয়ার ফলে করোনা ভাইরাসের টিকার পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ করেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। তবে এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি। করোনা ভাইরাসের টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ওই নারী। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে এই স্থগিত করায় টিকার অগ্রগতিতে কিছু বিলম্ব ঘটবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরীক্ষা অব্যাহত থাকা উচিত এবং আরো ডাটা সংগ্রহ করা উচিত। এ কথা লিখেছে লন্ডনের অনলাইন দ্য টেলিগ্রাফ।
এতে বলা হয়, টিকার পরীক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন ওই ব্রিটিশ নারী। তার বিরল স্নায়ুবিক মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও এই টিকা প্রস্তুতকারক কোম্পানি এস্ট্রাজেনেকা তৃতীয় দফার পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করেছে। এটা হতে পারে একটি খারাপ খবর। তবে এখনও অতোটা খারাপ খবর নয়। এটা চলার পথে মাত্র একটি হোঁচট খাওয়ার মতো। যে ধারায় এই টিকার অগ্রগতি চলছিল তাতে সবাই আশাবাদী ছিলেন এ বছরের মধ্যেই জরুরিভিত্তিতে লাইসেন্স বা অনুমোদন পাবে। একযোগে এর পরীক্ষা চলছিল বৃটেন, ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্ববাসী অক্সফোর্ড আবিষ্কৃত এই টিকার বিষয়ে আশাবাদী এবং আস্থাশীল।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ভ্যাক্সিন সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর বিটি কাম্পম্যান বলেছেন, যখন এমন ট্রায়াল বা পরীক্ষা চলে তখন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়াটা সব সময়ই উদ্বেগের। তবে যদি ৫ জন কিংবা ৬ জনের এমন দেখা দিতো তাহলে বেশি উদ্বেগের ব্যাপর ছিল। তাই এই টিকার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেছে এমনটা এত তাড়াতাড়িই বলা যাবে না।
তবু এই ঘটনা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। মঙ্গলবার রাতে যখন জানানো হয়েছে পরীক্ষায় অংশ নেয়া একজন বৃটিশ নারী মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং টিকার পরীক্ষা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে, তখন এর প্রভাব পড়েছে এস্ট্রাজেনেকার শেয়ারের ওপর। এ কোম্পানির শেয়ারের মূল্যও পড়ে গেছে। ১৯৭৬ সালে নোভেল ফ্লু ভাইরাসের টিকা দ্রুততার সঙ্গে অনুমোদন দেন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড। তখন থেকেই একটি ভীতি মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, টিকা থেকে মারাত্মক স্নায়ুবিক সঙ্কট দেখা দিতে পারে। প্রেসিডেন্ট ফোর্ড টিকা অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পরামর্শ উপেক্ষা করেছিলেন। তিনি এইচ১এন১ টিকা অনুমোদন দিয়েছিলেন নিউজার্সিতে ফোর্ড ডিক্স সামরিক ঘাঁটিতে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভয়াবহ সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর। তার ভয় ছিল, এর মধ্য দিয়ে ভয়াবহ এক মহামারী শুরু হতে পারে। তাই শুরুতেই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। তার ওপর ওটা ছিল তার নির্বাচনী বছর।
সেখানে মহামারী কখনো দেখা দেয়নি। কিন্তু তার অনুমোদন দেয়া টিকা সেখানে সৃষ্টি করে গিলাইন-বার সিনড্রোম নামের একটি স্নায়ুবিক সঙ্কট। এই সমস্যা থেকে মানুষ বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে। ৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষের মধ্যে ৪৫০ জনের ক্ষেত্রে দেখা দেয় ওই গিলাইন-বার সিনড্রোম। এতে মারা যান কমপক্ষে ৩০ জন। এরপরই টিকার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। সেই থেকে টিকার অনুমোদন নিয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয় এখন। ঘটনার ফলশ্রুতিতে ওই নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ফোর্ড।
ওদিকে এস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাসকাল সোরিয়ট বলেছেন, যে বৃটিশ নারী এই টিকা নিয়ে অসুস্থ হয়েছেন তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। বৃহস্পতিবার তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেতে পারেন। তিনি আরো বলেছেন, অন্য একজন স্বেচ্ছাসেবী স্নায়ুবিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পর এস্ট্রাজেনেকা তার পরীক্ষা জুলাইয়ে একবার স্থগিত করেছিল। তবে এসব এই টিকার সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা তা যাচাই করে দেখা দরকার। এটাকে বলা যেতে পারে ট্রান্সভার্স মাইলিটিস। গিলাইন-বার সিনড্রোম এবং ট্রান্সভার্স মাইলিটিস ভিন্ন জিনিস। তবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক আছে। তারা উভয়েই স্নায়ু তন্ত্রকে আক্রান্ত করে। ভাইরাসের সংক্রমণ ও টিকার কারণে এমনটা হতে পারে। এ দুটি বিষয়ের সঙ্গে কোভিড-১৯ এবং সার্স ভাইরাসের সম্পর্ক আছে। ট্রান্সভার্স মাইলিটিস থেকে বিকলাঙ্গতা, সংবেদন সমস্যা, মূত্রথলির সমস্যা এবং অন্ত্র অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। বেশির ভাগ মানুষ সুস্থ হতে পারেন। কিন্তু এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যদি মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করে তাহলে তা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে এবং ভয়াবহভাবে চলাচলে অক্ষম করে তুলতে পারে।