পাপুল কান্ডে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৪ নেতাকে দুদকে তলব
সাংসদ শহীদ ইসলাম পাপুল কান্ডে লক্ষ্মীপুরের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের চার নেতাকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন ও রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের আহবায়ক কাজী মো. জামশেদ বাকীবিল্লাহর উপস্থিত থাকার নির্দেশনা রয়েছে।
৯ সেপ্টেম্বর (বুধবার) একই কার্যালয়ে তলব করা হয়েছে জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু এবং জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা পরিষদের সদস্য শাখায়াত হোসেন আরিফকে।
স্থানীয় নেতাদের বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে শহিদ ইসলাম পাপুল লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ হওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই ৪ নেতাকে দুদকে তলব করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই ৪ নেতাকে তলব করে চিঠি দেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক সালাহ উদ্দিন। ৬ জুন অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রে’প্তার হন লক্ষ্মীপুর ২ আসনের এমপি শহিদ ইসলাম পাপুল। কুয়েতের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে তার নামে জমা থাকা ১৩৮ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে শহিদ ইসলাম পাপুলকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে এমপি হতে সহযোগিতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন ও জেলা যুবলীগের সভাপতি, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু।
এছাড়াও পাপুলের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অভিযোগ রয়েছে ওই নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান।
অন্যদিকে বিপুল আর্থিক সুবিধা নিয়ে ২০১৬ সালে পাপুলকে রাজনীতিতে আনতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কাজী মো. জামশেদ কবির বাকীবিল্লাহ। বাকী বিল্লাহ পাপুলের ছত্রছায়ায় রায়পুর উপজেলার সিএনজি স্টেশন ও অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে চাঁদা বাবদ প্রায় ২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
একসময় থাই গ্লাসের মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন যুবলীগ নেতা ও জেলা পরিষদের সদস্য শাখাওয়াত হোসেন আরিফ। বর্তমানে তিনি শতকোটি টাকার মালিক। পাপুলের প্রত্যক্ষ সহায়তায় বিনা টেন্ডারে কয়েক কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ পান আরিফ। জেলা পরিষদের সদস্য হয়ে প্রভাব খাটিয়ে আরিফ ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ঠিকাদারি কাজ নিয়ে ওইসব কাজ বাস্তবায়ন না করেই ভুয়া বিলে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
পাপুলের ক্ষমতাকে পুঁজি করে রায়পুরের আওয়ামী লীগ নেতা মাস্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পাপুলের অনুপস্থিতিতে এলাকায় তার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান। তিনি পাপুলের টেন্ডার বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, স্থানীয় সালিশসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
বাবুল পাঠান পাপুলের কাছ থেকে প্রায় ছয় কোটি টাকা নিয়ে তার ছেলে মেহেদী হাসান শিশিরকে পাঠানের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজ করছেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই চার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকে তলব করেছে দুদক।