ফেসবুকের সহায়তায় ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা ছড়াচ্ছে মুসলিম বিদ্বেষ
ফেসবুকের মাধ্যমে মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ বাড়তে শুরু করেছে ভারতে। অভিযুক্তরা নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি দলের সদস্য হওয়ায় ফেসবুক তার ঘৃণা সংক্রান্ত নীতিমালা কার্যকর করেনি। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এই সোশাল মিডিয়া জায়ান্টের স্বচ্ছতা নিয়ে।
সম্প্রতি মুসলিম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন যে, ফেসবুক কিছু নীতি নির্ধারক বিজেপির খুব ঘনিষ্ঠ। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদরা জড়িত থাকায় এই সংস্থাটি তার প্ল্যাটফর্ম থেকে মুসলিমদের প্রতি ঘৃণামূলক বক্তৃতা অপসারণের পরিবর্তে সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছে। টাইম ম্যাগাজিনের নথি অনুসারে, ২০১৪ সালে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ফেসবুকের পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর শিবনাথ ঠাকরাল বিজেপির নির্বাচনী প্রচারে সহায়তা করার জন্য দলীয় নেতৃত্বের সাথে কাজ করেছিলেন।
গত ১৪ আগস্ট ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বর্তমান এবং প্রাক্তন ফেসবুক কর্মীদের বরাত দিয়ে জানায় যে, বিজেপির সরকারি আইনজীবি টি. রাজা সিং মুসলিম অভিবাসীদের গুলি করার আহ্বান জানান। এরপর তাকে বিপজ্জনক বলে অভিহিত করে ফেসবুকে নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন এমন অন্য ফেসবুক কর্মীদের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করেছেন ভারতে ফেসবুকের শীর্ষ নীতি নির্ধারক আঁখি দাস।
তিনি যুক্তি দিয়ে দাবি করেছেন যে, সরকারি আইনজীবিকে শাস্তি দেওয়ার ফলে ভারতে ফেসবুকের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ভারতে ফেসবুকের ব্যবসায়িক সম্ভাবনাগুলো সহজেই অনুমেয়। ভারতে ৩২৮ মিলিয়ন ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানটির বৃহত্তম বাজার। প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ভারতীয় ফেসবুকের মেসেজিং পরিষেবা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে। প্ল্যাটফর্মগুলো ভারতের রাজনীতিতে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে আঁখি দাস বলেছিলেন যে, মোদি তার নির্বাচনী প্রচারণায় ফেসবুক ব্যবহার করেছিলেন বলেই জিতেছিলেন। তবে, ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপকে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ঘৃণামূলক বক্তৃতা এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে সংস্থাটিকে ভারত জুড়ে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মধ্যে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর মারাত্মক হামলা চালাতে সহায়তা করার জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
অবশ্য হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন করার জন্য নিয়োজিত ফেসবুক কর্মীরা টাইমকে বলেছে যে, ফেসবুক বিজেপির সদস্য ও সমর্থকদের আপলোড করা পোস্টগুলিতে নজরদারি করতে অনীহা প্রকাশ করেছে। কারণ হিসেবে তারা যুক্তি দেখাচ্ছে যে, প্রতিষ্ঠানটি ভারতে তার বৃহত্তম বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সরকারের সাথে লড়াই করতে চায় না।
ফেসবুকের হয়ে কাজ করার আগে ঠাকরাল বিজেপির একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। যদিও ক্ষমতাসীন দলের সাথে সংযোগ স্থাপনে দালাল ভাড়া করা এ ধরণের সংস্থাগুলোর জন্য একটি সাধারণ বিষয়। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, ফেসবুকের ভারত নীতি সংক্রান্ত কর্মীদের ইতিহাস থেকে প্রতীয়মান যে, সরকারকে খুশি রাখতে তাদের উৎসাহ বিজেপির রাজনীতিবিদদের বিদ্বেষমূলক বক্তৃতাগুলোর পক্ষে কাজ করেছে।