শত্রুতার ফুটন্ত দুধ ঝলসে দিল ছোট্ট সিয়ামের শরীর
সিয়াম কিছুদিন আগে ১০ বছরে পা রেখেছে। পড়ছে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়। গত শনিবার বিকেলে বাড়ির কাছে বালুর স্তূপে খেলা করায় ক্ষুব্ধ হন বালুর মালিক শিল্পী বেগম নামের এক গৃহকর্ত্রী।
সিয়ামের পরিবারের অভিযোগ, এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কথা-কাটাকাটির সূত্র ধরে ক্ষোভ থেকে ফুটন্ত দুধ সিয়ামের শরীরে ঢেলে দেন শিল্পী। এতে সিয়ামের শরীরের একাংশ দগ্ধ হয়। পোড়া শরীর নিয়ে সিয়াম এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার নোয়াগাঁও ব্যাপারীপাড়ার।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা নিয়ামুল কবির জানান, সিয়ামের ডান হাত, কাঁধ, মুখমণ্ডলের নিচের অংশ পুড়ে গেছে। শরীরে যন্ত্রণা থাকলেও মৃত্যুঝুঁকি নেই।
তবে শিল্পী বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কথা-কাটাকাটির সময় চুলায় ভাত রান্না হচ্ছিল। তখন অসাবধানতাবশত সিয়াম চুলার ওপর পড়ে যায়। এতে গরম মাড়ে সে দগ্ধ হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, সিয়ামের বাবা মানিক মিয়া পেশায় অটোরিকশার চালক। মা খোর্শেদা বেগম গৃহিণী। থাকেন নোয়াগাঁও ব্যাপারীপাড়ায়। শিল্পীর স্বামীর নাম সুলায়মান মিয়া। থাকেন প্রবাসে। সুলায়মান ও মানিকের ঘর লাগোয়া। কিছুদিন আগে নির্মাণকাজের প্রয়োজনে শিল্পী বাড়ির কাছে বালু এনে রাখেন। শনিবার সিয়াম ওই বালুর ওপর বসে খেলছিল। শিল্পী এসে বারণ করেন। কিন্তু সিয়াম বারণ না শুনে বালুর ওপরে খেলছিল। তখন শিল্পী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে বকাঝকা শুরু করেন। খবর শুনে সিয়ামের মা খাদিজা বেগম এসে শিল্পীকে বকাবকি করেন। এ নিয়ে দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে শিল্পী গরম দুধ নিয়ে এসে সিয়ামের ওপর ঢেলে দেন। সিয়াম চিৎকার শুরু করে। দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু অর্থের অভাবে সিয়ামকে ঢাকায় না নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সিয়ামের মা খোর্শেদা বেগম অভিযোগ করেন, ঝগড়ার একপর্যায়ে শিল্পী চুলা থেকে ফুটন্ত দুধের পাতিল নিয়ে এসে তাঁর ছেলের ওপর ঢেলে দেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে খোর্শেদা বলেন, ‘আমরা গরিব। টাকা নাই। ডাক্তার বলছে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’