প্রধান শক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষে পথ হারিয়েছে ভারত

0

চীন ও ভারতের মধ্যকার সীমান্ত বিরোধের সর্বশেষ রাউন্ড স্নায়ু অস্ত্র দিয়ে একটি যুদ্ধকে পুরোভাগে নিয়ে এসেছে। কোভিড-১৯ ও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে কিছু ভারতীয় ঝুঁকি অনুভব করে এবং একইসাথে তথাকথিত কৌশলগত সুযোগ হাতে পায়। ভারতের কিছু কৌশলবিদ বিশ্বাস করেন যে চীন কঠিন কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে থাকায় চীনকে দমন করার একটি সুযোগ পেয়েছে তাদের দেশ। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের সাথে ঘনিষ্ঠতর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে ভারতের পরাশক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য।

ভারতের উচ্চতর আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভের উচ্চাভিলাষ যৌক্তিক এবং বোধগম্য। তবে অনেক ভারতীয়ের জীবন যখন মহামারী ও অর্থনৈতিক দুর্দশায় কঠিন অবস্থায় আছে, তখন পরাশক্তির কৌশল নিয়ে আলোচনা করা ঠিক নয়।

অবশ্য চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধটি ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যাবলী থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেয়ার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া অব্যাহত রয়েছে। তবে বক্তব্য গ্রহণ করার সময় ভারতের কৌশলগত সংস্কৃতির কিছু বৈশিষ্ট্যও এতে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।

প্রথমত, ভারতের কৌশলগত চিন্তাধারার ভিত্তি হচ্ছে নিজেকে পরাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা। ভারত অনেক দিন ধরেই পরাশক্তি হওয়ার কথা ভাবছে। ভৌগোলিকভাবে ভারত দক্ষিণ এশিয়ান উপমহাদেশের কেন্দ্রে অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে এটি আঞ্চলিক দেশগুলোর সংযোগস্থলে অবস্থিত। ভৌগোলিক আকার, জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক শক্তির দিক থেকেও এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে আছে ভারত।

এতসব সুবিধা থাকার কারণে স্বাধীনতার আগেই ভারত পরাশক্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সে নিজেকে বড় শক্তি হিসেবে দেখছে।

স্নায়ু যুদ্ধের সময় অল্প কিছু দেশের একটি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করেছে ও উভয়পক্ষ থেকে কৌশলগত স্বাধীন অবস্থানে থেকেছে। এর ফলে দুই শক্তির মাঝামাঝি অবস্থানে থেকে দীর্ঘ দিন নেতৃত্ব দিতে পেরেছে। চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার মধ্যেও একই ধরনের কৌশলগত সম্ভাবনা দেখতে পারে ভারত।

দ্বিতীয়ত, ভারতের কৌশলগত চিন্তাভাবনা সবসময়েই খুবই সক্রিয় থাকে। এর সভ্যতায় সক্রিয় চিন্তাভাবনার একটি ঐতিহ্য আছে। এ কারণেই বৌদ্ধ ও অন্যান্য কিছু বৈশ্বিক ধর্মের সূচনা হয়েছে এখানে। উপমহাদেশে দীর্ঘ মেয়াদি গোলযোগ ও যুদ্ধ আঞ্চলিক দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব কৌশলগত পথ অনুসরণের ব্যাপক সুযোগ দিয়েছে।

তৃতীয়ত, ভারতের কৌশলগত চিন্তাধারায় কূটনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভারতের স্বাধীনতা লাভের ইতিহাসটিও অনন্য। দেশটির প্রতিষ্ঠাতারা রাজনৈতিক কূটনীতির আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। 

এই কূটনীতিকেই আশ্রয় করে ভারত এগিয়ে যেতে চেয়েছে শুরু থেকেই। ভারতের কূটনৈতিক এলিটদের বেশির ভাগই ইংরেজিতে দক্ষ। কঠোর নিয়োগ পদ্ধতিতে তাদের নিয়োগ করা হয়। তাদের আছে কঠিন কূটনৈতিক দক্ষতা, বিদেশী নীতিনির্ধারণী চিন্তাভাবনা। এটি কিন্তু ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থা থেকে আলাদা। রাজনীতিবিদেরা সাধারণ লোকের ভোটে নির্বাচিত হন। ফলে বিদেশীদের সাথে দেনদরবারে রাজনীতিবিদেরকে এই কূটনৈতিক এলিটদের শরাণাপন্ন হতে হয়। 

পরাশক্তিগুলোকে প্রথমে নিজের দেশে অভ্যন্তরীণভাবে শক্তিশালী হতে হয়। এখানে শক্তি থাকলেই কূটনৈতিক বিভাগ সক্রিয় ভূমিকা লাভ করতে পারে। 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com