ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করছে কিশোর গ্যাং!

0

ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং এখন পেশাদার সন্ত্রাসীতে পরিণত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব এমনকি ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবেও কাজ করছে তারা। পকেটে নগদ টাকা, হাতে অস্ত্র ও মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে উল্লাসের সাথে হত্যার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও জামিনে ছাড়া পেয়ে আরো দাপটের সাথে পুনরায় সেই কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। মামলা তুলে নিতে বাদিদের নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের হত্যাকাণ্ড এবং বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমনটি মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক নানা অপকর্ম করাতে এসব গ্যাংয়ের সদস্যদের শেল্টার দিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে।

গত ১৫ জুলাই রাতে কামরাঙ্গীরচরে কিশোর গ্যাংয়ের একটি গ্রুপের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় সজীব নামে ১৭ বছরের এক কিশোর। ওই রাতে সজীবকে কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুরের ৭ নম্বর গলি থেকে তুলে নিয়ে যায় ইসরাফিলের কিশোর গ্যাংয়ের ১৫-১৬ জন কিশোর। তারা সজীবকে ওই এলাকার আজিজিয়া মসজিদের গলিতে নিয়ে নির্মমভাবে পেটাতে শুরু করে। বাঁচার জন্য তাদের হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করতে থাকে সজীব। কিন্তু একজনের পা জড়িয়ে ধরলে অট্টহাসি দিয়ে অন্যরা পেটাতে শুরু করে। একপর্যায়ে সজীব মাটিতে শুয়ে পড়লে তারা সজীবের পুরুষাঙ্গে এলোপাতাড়ি লাথি-মারতে শুরু করে। কিশোর গ্যাংয়ের এই অত্যাচার অনেকেই দাঁড়িয়ে দেখলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন প্রতিবাদ করতে না পারলেও সজীবের বাবা রুহুল আমিনকে ফোন করে বিষয়টি জানান। রুহুল আমিন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই তারা সজীবকে ছুরিকাঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।

রুহুল আমিন সোমবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলেন, প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ১৫-১৬ জন মিলে আমার ছেলেটাকে বিভিন্নভাবে যন্ত্রণা দিয়েছে। তার পুরুষাঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। ছেলেটা অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে যখন অচেতন হয়ে পড়েছিল তখন তারা বলছিল ‘ওকে আর কষ্ট দিস না ও অনেক কষ্ট পাচ্ছে, এবার উপরে পাঠানোর ব্যবস্থা কর। সাথে সাথে ইয়ামিন নামে একজন আমার ছেলের পিঠে আট ইঞ্চি লম্বা একটি ছুরি ঢুকিয়ে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

রুহুল আমিন বলেন, ঘটনার দিনই পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। এরপর একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করে ধরা দেয়। হত্যার পর সেই ছুরিটি ধুয়ে ইয়ামিন নামে একজন তার রুমেই রেখে দিয়েছিল; যা পরে পুলিশ উদ্ধার করে। তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বলেছে, ‘আমরা অন্য একজনকে হত্যা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভুল করে সজীবকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে’। এ দিকে গ্রেফতারের ২৪ দিনের মাথায় সজীব হত্যার ৩ নম্বর আসামি ইয়ামিন জামিনে বেরিয়ে এখন নিহত সজীবের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। ইয়ামিন তার কিশোর গ্যাংয়ের অন্য সদস্যদের নিয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে সজীবের বাড়িতে হামলা চালায়। সেখানে গিয়ে মামলা তুলে না নিলে সজীবের পুরো পরিবারকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়। এতে নিরাপত্তা চেয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি জিডি করেন রুহুল আমিন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না। উল্টো বিভিন্ন মাধ্যমে একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছে ইয়ামিন।

রুহুল আমিন বলেন, ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে পার্টির কাছ থেকে টাকা নিয়ে অন্য একজনকে খুন করতে চেয়েছিল হত্যাকারী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। কিন্তু সেখানে তারা আমার ছেলেকে খুন করে। তাহলে কাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাকে খুন করতে চেয়েছিল তারা। তিনি বলেন, দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সজীব ছিল সবার বড়। অসুস্থ হয়ে পড়ায় ভ্যান চালাতে পারছিলেন না রুহুল আমিন। যার কারণে নিউমার্কেট গাউছিয়া এলাকায় হকারি করে সংসারের হাল ধরেছিল কিশোর সজীব।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, বর্তমানে রাজধানীতে ৫০টিরও বেশি কিশোর গ্যাং রয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ঘটনায় তাদের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তারা বলেন, কিশোর গ্যাং দমনে পরিবারকেই এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। কার সন্তান কোথায় কী করছে, কাদের সাথে মিশছে এসব খোঁজ রাখতে হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com