চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধে ছোটাছুটি দিল্লির

0

ভারত দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের সাথে নতুন করে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়াসে গত মাসজুড়ে ব্যস্ত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও ভারত-চীন উত্তেজনা বাড়ার প্রেক্ষাপটে নয়া দিল্লি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
আগস্ট মাসের শুরু থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় তার প্রতিপক্ষদের সাথে কথা বলেছেন, পররাষ্ট্রসচিবকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন বিশেষ বার্তা দিয়ে, মালদ্বীপের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তার কথা ঘোষণা করার নির্দেশনা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্র-ভারত উচ্চপর্যায়ের সপ্তাহব্যাপী বৈঠক শুরু হচ্ছে। তার আগে দিয়ে এসব কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরাম নামে অমুনাফামূলক গ্রুপের আয়োজে এই বৈঠকে বক্তব্য রাখবেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতসহ আরো অনেকে। উল্লেখ্য, জেনারেল রাওয়াত হলেন মোদি সরকারের প্রধান সামরিক উপদেষ্টা।

ফোরামটি যদিও অর্থনৈতিক ইস্যুগুলোর দিকেই মূল নজর দেবে, কিন্তু চীনা সম্প্রসারণবাদ নিশ্চিতভাবেই এজেন্ডায় থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত নবতেজ সর্না বলেন, ওয়াশিংটন ও নয়া দিল্লি ক্রমবর্ধমান হারে চীনা হুমকি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠছে।

তিনি বলেন, বেইজিং দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত সীমান্তসহ অনেক এলাকায় চীনের পেশী প্রদর্শনের বিষয়টি দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বাস্তবায়ন ও এর আগ্রাসী পরিকল্পনাও দৃশ্যমান হচ্ছে।

কয়েক দশক ধরে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার অনেক প্রতিবেশীর সাথে বেশ আধিপত্যমূলক কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছিল। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক, ভাষা, ধর্মীয় কারণে তা করা ভারতের জন্য সহজ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন তাদের বেশ প্রবলভাবে প্রবেশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মতে, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে চীন প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার ঢেলেছে।

এসব বিনিয়োগের অনেকগুলোই উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশবিশেষ। মোদির প্রশাসন মনে করে, চীনের এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো ভারতকে ঘিরে ফেলা।
আবার নয়া দিল্লিও থেমে নেই। বাংলাদেশের বন্দর ও রেলওয়ে নির্মাণ, শ্রীলঙ্কার বন্দর প্রকল্প, নেপালে রেললাইন কানেকটিভিটি কর্মসূচিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে।

কিন্তু তবুও কূটনীতিকরা বলছেন, ভারতের এই চেষ্টার মধ্যে ত্রুটি রয়েছে। তাদের মতে, ভারত তার ছোট প্রতিবেশীদের সাথে সমান মর্যাদায় আচরণ না করে দাদাগিরি দেখাচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মোদি প্রশাসনের উদ্বেগ আছে প্রতিবেশী বাংলাদেশকে নিয়েও। খবরে প্রকাশ, তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ ধরে রাখতে চীনের কাছে থেকে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে এক বিলিয়ন ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ।

প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রবিষয়ক নিউজ ওয়েবসাইট স্ট্র্যাটনিউজগ্লোবালের এডিটর-ইন-চিফ নিতিন গোখলে বলেন, ভারতীয় নৌবাহিনী ভারত মহাসাগরে সহজাত আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তবে সে জানে, মালাক্কা প্রণালীতে চীনকে চেপে ধরা সম্ভব নয়, কাঙ্ক্ষিতও নয়।
নেপালে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত রঞ্জিত রাই বলেন, নয়া দিল্লির জানা প্রয়োজন যে চীন এখানে এসেছে থাকতে। তিনি অবশ্য স্বীকার করেন, এ ধরনের পরামর্শ দেয়ার সময় এখন নয়। কারণ তা ভারতের জনমতের বিরুদ্ধে।

তিনি বলেন, চীন ও ভারত- উভয় দেশে উচিত এই অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে পরস্পরকে সহায়তা করা।

তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত সমস্যার সমাধান হলে হাইড্রোকার্বন খাতে সহযোগিতার বিশাল দুনিয়া খুলে যাবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com