দিল্লীর নিয়ন্ত্রণে বন্দর রেল ও রাস্তা
আগামী ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতা থেকে ভারতীয় পণ্যবাহি জাহাজ চট্রগ্রাম বন্দরে আসছে। জাহাজে ৬ শতাধিক কনটেইনার ভারতীয় পণ্য রয়েছে। এরমধ্যে ১১০ কনটেইনার চট্রগ্রাম বন্দর হয়ে মালয়েশিয়ায় রফতানি হবে। বাকী কনটেইনার গুলো বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আমদানিকৃত। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইন্ডিয়ান বাণিজ্যের সুবিধার্থে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করার একাধিক চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির অধীনে ভারত তার বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে নাম মাত্র শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। ইন্ডিয়ান বাণিজ্য সম্প্রসারনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ বিরোধী অনেক চুক্তি হয়েছে দিল্লীর সাথে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি। এ চুক্তির আওতায় ভারতীয় আন্তর্জাতিক বানিজ্যের স্বার্থে ব্যবহৃত হবে চট্রগ্রাম বন্দর।
সূত্র জানায়, এশিয়াটিক মুন নামের একটি জাহাজ পণ্য নিয়ে চট্রগ্রাম বন্দরে পৌছাবে। মালয়েশিয়ায় রফতানির জন্য নির্ধারিত কনটেইনার গুলো চট্রগ্রাম বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য নির্ধারিত শেডে রাখা হবে। ক্যাপমন্ট্রি নামক অপর একটি জাহাজ আসার পর এই কনটেইনার গুলো নিয়ে মালয়েশিয়ার ক্যালাং বন্দরে যাবে। ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইন্ডিয়ান পন্যবাহি কনটেইনার বিনা শুল্কে চট্রগ্রাম বন্দরে ২৮দিন রাখতে পারবে। ২৮ দিন পর্যন্ত কোন রকমের মাসুল দিতে হবে না চট্রগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষকে। কোন কারনে ২৮ দিনের বেশি রাখতে হলে বন্দর কতৃপক্ষ স্টোরিং ভাড়া পাবে স্থানীয় নিয়মে।
ইন্ডিয়ান ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যের শিপিং এজেন্টের নাম ট্রেডেন্ট শিপিং লাইন। এ প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, ১০দিনের মধ্যেই কনটেইনার গুলো মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে চট্রগ্রাম বন্দর ছাড়তে পারবে বলে তারা আশা করছেন।
উল্লেখ্য, গত ২০ জুলাই ইন্ডিয়ান পণ্য নিয়ে চট্রগ্রাম বন্দরে আসে আরেকটি জাহাজ। এ পণ্য গুলোকে রাষ্ট্রীয় খরচে পাহারা দিয়ে পৌছে দেয়া হয় ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা এবং আসামে। তখন বন্দর কতৃপক্ষের নিকট সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন যে, বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ার পণ্য বাহী জাহাজ একই সাথে চট্রগ্রাম বন্দরে নোঙ্গর করতে চাইলে কোনটিকে প্রাধাণ্য দেয়া হবে? তখন জবাবে বন্দর কতৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অবশ্যই ইন্ডিয়ান পণ্যবাহী জাহাজ এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে। ট্রানজিট চুক্তিতে সেরকম ধারাই অন্তর্ভুক্ত আছে।
ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তি সমূহে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার জাতীয় স্বার্থকে এভাবেই জলাঞ্জলি দিয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ইন্ডিয়ার সাথে একের পর এক দেশ বিরোধী চুক্তি করা হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য, ইন্ডিয়ান পণ্য পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য গুলোতে যাতায়াতের জন্য বাংলাদেশের উপর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা পেতে পাকিস্তান আমল থেকেই দিল্লী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল । ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর একে একে নানা রকম চুক্তি হয় ইন্ডিয়ার সাথে। এর মধ্যে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী ট্রানজিট এবং ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তিও রয়েছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের একাংশ থেকে অন্য অংশে পণ্য পাঠানো ছাড়াও ইন্ডিয়ান পন্য বিদেশে রফতানি করতেও বাংলাদেশের রেল, রাস্তা ও বন্দর ব্যবহারের জন্য ঢাকার সাথে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি করেছে দিল্লী।
ইন্ডিয়াকে একতরফা সুবিধা দিয়ে নানা রকম চুক্তি করা হলেও বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা তিস্তার পানি আজ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হয়নি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতিও বিশাল। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় প্রতিদিন বিএসএফ কতৃক বাংলাদেশিদের হত্যা করা হচ্ছে। প্রতিবেশী বৃহত শক্তির সাথে দীর্ঘ দিনের এই সব সমস্যার কোন সমাধান সম্ভব না হলেও দেশ বিরোধী ট্রানজিট এবং ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি ঠিকই হয়েছে।
(c)