আক্রান্তের বীর্যেও পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসের আরএনএ
দু’এক মাসেই যে ঝুঁকি কমে যাবে, এমন নাও হতে পারে। কারণ শুক্রাশয়, চোখ, প্ল্যাসেন্টা, ভ্রূণ ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র হল এমন জায়গা, যেখানে ভাইরাস থেকে যেতে পারে দিনের পর দিন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হাত সেখান পর্যন্ত পৌঁছে তাদের দ্রুত ধ্বংস করতে পারে না।
সম্প্রতি চীনে করোনা আক্রান্ত পুরুষ রোগীদের নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্ত ব্যক্তির বীর্যেও কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে কোভিড-১৯।
জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন নেটওয়ার্ক ওপেন এ এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর অসুস্থ কম বয়সি ৩৮ জন রোগীর সিমেন স্টাডি করেন বিজ্ঞানীরা। ১৫ জনের বীর্য নেয়া হয় রোগের জটিল পর্যায়ে। তার মধ্যে ৪ জনের বীর্যে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বাকি ২৩ জন দেন কিছুটা সুস্থ হবার পর। তাদের মধ্যেও দু’জনের বীর্যে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়।
এই গবেষণা থেকে বোঝা যাচ্ছে, রোগ হালকাভাবে থাকলে ও পুরোপুরি সেরে গেলে ঝুঁকি বেশ কম! তবে জটিল অবস্থার রোগীদের নিয়ে চিন্তা। তবে বিভিন্ন গবেষণা থেকে যা জানা গেছে, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষদেরই রোগ জটিল হয় বেশি। দু’এক মাস চিকিৎসা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে পারলে তাদেরও রোগের প্রভাব আস্তে আস্তে চলে যায়।
কারণ দু’এক মাসেই যে ঝুঁকি কমে যাবে, এমন নাও হতে পারে। কারণ শুক্রাশয়, চোখ, প্ল্যাসেন্টা, ভ্রূণ ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র হল এমন জায়গা, যেখানে ভাইরাস থেকে যেতে পারে দিনের পর দিন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হাত সেখান পর্যন্ত পৌঁছে তাদের দ্রুত ধবংস করতে পারে না।
কোনো ব্যাকেটেরিয়া, ভাইরাস বা অন্য কোন জীবাণুর কারণে শরীর যখন ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়, তখন এর বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যত বিপর্যয় জটিল রূপ ধরে, তত মরিয়া হয়ে ওঠে ইমিউনিটি। জীবাণু মারতে এমন সব রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়াতে শুরু করে, যাদের প্রভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে চাপ পড়ে। প্রবল প্রদাহ শুরু হয়ে যায় শরীর জুড়ে। সংক্রমণ বেড়ে গেলে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গগুলো এই চাপ নিতে না পেরে একে একে খারাপ হতে শুরু করে। বিপর্যয় নেমে আসে শরীরে। প্রকৃতি হয়তো শরীরের এই কয়েকটি গুরুতর অংশকে এই বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে চায়। তাই সে এমন ব্যবস্থা করেছে, যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার এই লড়াই আর চাপ এসব অংশে না পৌঁছায়। সেই কারণেই এসব জায়গার ভাইরাস কিছু দিন নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারে।
এর আগে ২০১৩-২০১৬ সময়কালে, যখন পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, তখনো এরকম নজির দেখতে পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। রোগ সেরে যাওয়ার পর বছর তিনেক পর্যন্ত কারো কারো বীর্যে ইবোলা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যৌন সংসর্গের মাধ্যমে তা ছড়ায় বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত।
এনিয়ে এখনো গবেষণা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। তাই এখনই কোনো সমাধান বা বিপদের সম্ভাবনার কথা বলা যাচ্ছে না। তবে আপাতত সাধারণ সাবধানতা মেনে চলার পরামর্শই দিচ্ছেন তারা। যেমন হাত ধোয়া, মাস্ক পরার মতোই শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গর্ভনিরোধক ব্যবহার করাই উত্তম বলে মনে করছেন গবেষকরা।
সূত্র: ইকোনমিক টাইমস