৯৫ শতাংশ নিয়োগেই ফল জালিয়াতি!
পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) সহকারী হিসাব কর্মকর্তা পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে প্রিন্স মন্ডল অংশগ্রহণ করে মোট ৬৩ নাম্বার পেয়েছেন। কিন্তু সেই নাম্বার চূড়ান্ত ফলাফল তালিকায় পরিবর্তন করে করা হয়েছে ৮৫। শেখ মো. লতিফ উদ্দিনের ছেলে শেখ মো. হাসান আলী পরীক্ষায় মোট পেয়েছেন ৬৪ নাম্বার। এই প্রার্থীর নাম্বার চূড়ান্ত তালিকায় উঠেছে ৮৫। একইভাবে প্রিয় লালের ছেলে দীপঙ্কর প্রকৃতপক্ষে পেয়েছেন ৬১ নাম্বার। কিন্তু এ প্রার্থীর নিয়োগসংক্রান্ত চূড়ান্ত তালিকায় নাম্বার দেখানো হয়েছে ৮৫। একইভাবে সরকারি এ সংস্থার ৭২৭ জন জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬৯৫ জনের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় নাম্বার ঘষামাজা করা হয়েছে। যা মোট জনবল নিয়োগের ৯৫ দশমিক ৫৫ ভাগ। অর্থাৎ নিয়োগকৃত জনবলের মাত্র ৫ ভাগ ছাড়া বাকিগুলোতে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
তবে শুধু এখানেই শেষ নয়, দুই কর্মকর্তা মিলে চূড়ান্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধিমতে সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুমোদনও নেননি। এমনই সব কাণ্ড ঘটিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা পিডিবিএফ এর সাবেক পরিচালক আ আ ম আনোয়ারুজ্জামান ও যুগ্ম পরিচালক মো. শফিউল ইসলাম। নিয়োগসংক্রান্ত ভয়াবহ এ জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে উঠে আসে নানা চমকপ্রদ তথ্য। জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পর নিয়োগ কমিটির প্রধানকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু তার বরখাস্ত খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। পরে কৌশলে তাকে দেওয়া হয় দায়মুক্তি। আর একই অভিযোগে অভিযুক্ত নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিবকে নামমাত্র শাস্তি দিয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি। সংস্থাটির নথিপত্র ঘেঁটে এসব তথ্য জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৫ ও ’১৬ সালে পিডিবিএফের দুটি পদে মোট ৭২৭ জন জনবল নিয়োগ নিয়ে নানা অভিযোগের পর তদন্তে নামে সংস্থাটি। গঠন করা হয় তিন সদস্যের কমিটি। এ কমিটি দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। কমিটি নিয়োগ ও পদোন্নতিসংক্রান্ত সব নথি, রেকর্ডপত্র ও অন্যান্য দলিল-দস্তাবেজ পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে। তদন্তের অংশ হিসেবে নিয়োগ কমিটির সভাপতি আ আ ম আনোয়ারুজ্জামান ও সদস্য সচিব মো. শফিউল ইসলামের বক্তব্য গ্রহণ এবং তাদের লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়। এ দুই কর্মকর্তা সারা দেশে অনুষ্ঠিত নয়টি কেন্দ্রের ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রস্তুত করার জন্য দায়িত্ব পান। তারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশও করেন। এতে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৮০২ জন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৭০২ জন। লিখিত পরীক্ষার জন্য ৭০ এবং মৌখিক পরীক্ষার জন্য ৩০ নাম্বার ধার্য ছিল। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মোট প্রাপ্ত নাম্বার ৭৭ বা তদূর্ধ্ব এমন ৪৬৯ প্রার্থীকে মেধাতালিকা অনুসারে ব্যবস্থাপনা কর্র্তৃপক্ষ বরাবরে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৭২৭ জনকে। এ নিয়োগে ২৫৮ জন মাঠ সংগঠক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটির কোনো সুপারিশ নেই। মাঠ পরিচালন বিভাগ থেকে ৩০৪ জন মাঠ সংগঠকের চাহিদার বিপরীতে মোট ৭২৭ জন মাঠ সংগঠককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মাঠ সংগঠক পদে মাঠপর্যায়ের ৪২৩ জনের চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৬৯ প্রার্থীর নিয়োগ ছাড়া কোনো অপেক্ষমাণ তালিকা বা প্যানেল প্রস্তুত করা হয়নি। তাছাড়া ২৫৮ জন মাঠ সংগঠক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটির কোনো সুপারিশও পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ এই ২৫৮ জনের নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটির সভাপতি আ আ ম আনোয়ারুজ্জামান ও সদস্য সচিব মো. শফিউল ইসলাম একান্তভাবে দায়ী। এছাড়াও মাঠ সংগঠক পদে নিয়োগ দেওয়া ৭২৭ জনের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নাম্বার নমুনাভিত্তিক পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করা হয়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২২৫ প্রার্থীর মধ্যে ২১৫ জন প্রার্থীর পরীক্ষার প্রাপ্ত নাম্বার ট্যাম্পারিংয়ের মাধ্যমে কম অথবা বেশি করে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে, ট্যাম্পারিংয়ের হার ৯৫ দশমিক ৫৫ ভাগ।
তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ যা বলা হয়েছে : তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘মাঠ পরিচালন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখে অসৎ উদ্দেশ্যে ৩০৪ জনের বিপরীতে ৭২৭ জন মাঠ সংগঠক নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি করা হয়েছে। কম্পিলেশন (সংকলন) ও টেবুলেশন (তালিকাভুক্ত) কমিটি থেকে প্রাথমিকভাবে ৪৬৯ জনের মেধাতালিকা (অধিকাংশ প্রার্থীর নম্বর ট্যাম্পারিং করে) প্রস্তুতপূর্বক নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিব এবং চূড়ান্ত অনুমোদনকারী কর্মকর্তা (সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মো. মাহবুবুর রহমান) পারস্পরিক যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। আর এ কাজে দৃশ্যত বৈধতা আনয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সূক্ষ্ম চাতুর্যতা অবলম্বনের মাধ্যমে ৪৬৯ জন প্রার্থীর নিয়োগ সম্পন্ন করেন। অবশিষ্ট ২৫৮ প্রার্থীর নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটিকে অবহিত করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে মূলত দায়ী ব্যক্তিরা হলেন আ আ ম আনোয়ারুজ্জামান ও সদস্য সচিব মো. শফিউল ইসলাম।’
পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, ‘তালিকা প্রণয়ন ও সংকলন কমিটির নামে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সে কমিটি অধিকাংশ চাকরি প্রার্থীদের লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার প্রাপ্য নাম্বার ট্যাম্পারিংয়ের মাধ্যমে কমবেশি করে অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করেছে। অপেক্ষমাণ তালিকা না করে এমনকি মূল নিয়োগ কমিটিকে পাশ কাটিয়ে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারিতার ভিত্তিতে এ কমিটি একতরফাভাবে ফলাফল ট্যাম্পারিংয়ের মাধ্যমে এবং অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থের নিমিত্তে এ নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। জেলা কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং অন্যান্য কোটা অনুসরণ করা হয়েছে কি না সে বিষয়ে নিয়োগসংশ্লিষ্ট সব নথিপত্র অনুসদ্ধান করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতি আনোয়ারুজ্জামান ও সদস্য সচিব মো. শফিউল ইসলাম তার লিখিত বক্তব্যে কোটা অনুসরণ না করে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে লিখিত স্বীকারোক্তি প্রদান করেছেন। পিডিবিএফের বোর্ড অব গভর্নস হলো পিডিবিএফের মূল চালিকাশক্তি। বোড অব গভর্নসের অনুমোদন ছাড়া এ নিয়োগ ছিল বিস্ময়কর। কারণ এ নিয়োগ পিডিবিএফের বোর্ড অব গভর্নস কর্র্তৃক অনুমোদিত নয়। এতে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টিই ছিল অস্বচ্ছ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত।’
তদন্ত কমিটির সুপারিশে যা বলা হয়েছে : পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের উপসচিব মো. আজম ই সাদাতকে আহ্বায়ক এবং পিডিবিএফের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আমিনুল হক ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের উপপ্রধান সুব্রত শিকদারকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিই উল্লিখিত প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে বলা হয়, ‘মূল নিয়োগ কমিটিকে পাশ কাটিয়ে সংকলন ও তালিকাভুক্ত কমিটির মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের ৩০৪ জন চাহিদার বিপরীতে ৭২৭ জন মাঠ সংগঠক নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে নিয়োগ কমিটির সভাপতি আ আ ম আনোয়ারুজ্জামান ও সদস্য সচিব মো. শফিউল ইসলাম পারস্পরিক যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। উল্লিখিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা করা যেতে পারে।’
সুপারিশে আরও বলা হয়, ‘মাঠ সংগঠক পদে নিয়োগ প্রদানকৃত মোট ৭২৭ জনের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নাম্বার নমুনাভিত্তিক পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণে ২২৫ প্রার্থীর মধ্যে ২১৫ জন প্রার্থীর পরীক্ষার প্রাপ্ত নাম্বার ট্যাম্পারিংয়ের মাধ্যমে কম অথবা বেশি করে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন। অপেক্ষমাণ তালিকা প্রস্তুত না করে এ কমিটি অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থে সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে ও একতরফাভাবে ফলাফল ট্যাম্পারিং করে ২৫৮ প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ কমিটির সব সদস্যের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। জেলা কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং অন্যান্য কোটা অনুসরণ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি। ভবিষ্যতে এ ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা আবশ্যক। পিডিবিএফের বোর্ড অব গভর্নসের অনুমোদনবিহীন ও মাঠপর্যায়ের চাহিদা অপেক্ষা অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ছিল বিস্ময়কর, অস্বচ্ছ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে বোড অব গভর্নসের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন। নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মো. শফিউল ইসলাম কর্র্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই প্রার্থীর নাম্বার ট্যাম্পারিং করে ২৪ জন মাঠ সংগঠক নিয়োগের মাধ্যমে যে দুর্নীতি করেছেন তার জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। এ কারণে মো. শফিউল ইসলামের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন।’
নিয়োগসংক্রান্ত সব নথিপত্র বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনায় সন্দেহাতীতভাবে জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে সুপারিশে আরও বলা হয়, ‘এই নিয়োগটি পিডিবিএফের ইতিহাসে একটি ন্যক্কারজনক ও কলঙ্কময় ঘটনা বলে তদন্ত কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা না হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনা থাকবে। অবিলম্বে এ ধরনের গর্হিত কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তদন্ত কমিটি মনে করে।’
এ প্রতিবেদন দেওয়ার পর ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আইরীন ফারজানা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পিডিবিএফের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে চিঠি দেন। এরপর ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন এমডি মদন মোহন সাহা একটি অফিস আদেশ জারি করেন। সে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সংস্থার অতিরিক্ত পরিচালক আ আ ম আনোয়ারুজ্জামানকে পিডিবিএফ কর্মচারী প্রবিধানমালা-৩/২০১১ এর প্রবিধান ৪৯ এর বিধিমতে দায়িত্বে অবহেলা, অসদাচরণ, অফিস শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অদক্ষতা, অর্থ আত্মসাৎ, চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি, স্বার্থের বিনিময়ে স্বেচ্ছাচারিতা এবং সংস্থাকে ধ্বংস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় প্রবিধান ৫০ এর ১ (খ) (উ) উপপ্রবিধান মোতাবেক চাকরি হতে বরখাস্ত করা হলো।’ এতকিছুর পরও বরখাস্ত হওয়া এ কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে দায়মুক্তি। গুরুতর এসব অভিযোগ কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে গত বছর ৩ নভেম্বর পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ৭৭ সভা আহ্বান করা হয়। সে সভায় তৎকালীন সচিব মো. কামালউদ্দিন তালুকদার সভাপতিত্ব করেন। সভার ১৩ নাম্বার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, অতিরিক্ত পরিচালক আ আ ম আনোয়ারুজ্জামানের বরখাস্তের আদেশটি বাতিল করা হয়।
এ বিষয়ে আ আ ম আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘তদন্তের নামে কিছু অফিসার আমাকে ঝামেলায় ফেলেছে। তারা ভালোভাবে তদন্ত না করেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিল। পরে আমি তা নিয়ে আপিল করলে দায়মুক্তি দেওয়া হয়।’
উপপরিচালক শফিউল ইসলাম নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন। তার বিরুদ্ধেও ওই নিয়োগে বিস্তর অভিযোগ প্রমাণিত হয়। সংস্থাটির এমডি মদন মোহন সাহা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘পিডিবিএফ কর্মচারী প্রবিধানমালা-৩/২০১১ এর প্রবিধান ৪৯ এর বিধিমতে দায়িত্বে অবহেলা, অসদাচরণ, অফিস শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অদক্ষতা, অর্থ আত্মসাৎ, চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি, স্বার্থের বিনিময়ে স্বেচ্ছাচারিতা এবং সংস্থাকে ধ্বংস করার অপচেষ্টয় লিপ্ত থাকার অভিযোগে চাকরি প্রবিধানমালা ৩/২০১১ এর প্রবিধান এর ১ (খ) এর (অ) এর (৩) উপধারা মোতাবেক বেতন ক্রমের সর্বনিম্ন স্তরে শাস্তি প্রদান করা হলো। তিনি ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন না মর্মে ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে একটি অঙ্গীকারনামা প্রদান করবেন।’
এ অভিযোগ থেকে আনোয়ারুজ্জামান অব্যাহতি বাগিয়ে নেওয়ার পর শফিউল ইসলামকেও দায়মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে সুপারিশ করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের উপসচিব কাজী মোশতাক জহির, পিডিবিএফের যুগ্ম পরিচালক মর্জিনা বেগম ও উপপরিচালক আবদুস সাত্তার এ কমিটিতে রয়েছেন। তারা গত ১৪ আগস্ট একটি সভাও করেছেন। এরই মধ্যে অভিযুক্ত এ কর্মকর্তাকে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুগ্ম-পরিচালকের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বও দেওয়া হয়। এবার অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়ে এ পদে তাকে স্থায়ী করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব রেজাউল আহসান বলেন, ‘একজনকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে আমি আসার আগেই। আর শফিউল ইসলাম আমাদের কাছে তার শাস্তি কমানোর জন্য আবেদন করেছেন। তার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমরা নতুন করে কমিটি করে দিয়েছি। এখানে আইনের বাইরে গিয়ে তাকে পদোন্নতি বা অন্য কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।’