ফের বাড়ছে এলপিজির দাম, বাজার নিয়ন্ত্রণে ‘নীরব’ সরকার
তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম আরও এক দফা বাড়ানো হচ্ছে। আজ শনিবার (০৮ আগস্ট) থেকে প্রতি সিলিন্ডারে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি হতে পারে বলে জানা গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম বাড়ায় নাগরিকদের জীবনযাপন ব্যয় আরও বেড়ে যাবে।
দাম বাড়ানোর ফলে ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডার বর্তমানে যেখানে ৮০০ টাকায় কিনা যেতো যেটি কিনতে খরচ হবে ৯০০ টাকারও বেশি। তবে গত জুলাই মাসেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারপ্রতি এলপিজির দাম ১০০ টাকা কমিয়ে ৬০০ টাকা করেছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, দাম নিয়ন্ত্রণের কোনও উদ্যোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বৃদ্ধি করছেন। এছাড়া দাম বাড়ালেও বেসরকারি এলপিজি পরিবেশকরা খুচরা বিক্রেতাদের বিক্রি মূল্যের রশিদ দেন না। এ কারণে দাম বৃদ্ধির কারসাজি নিয়ে ভোগাদের মধ্যে দানা বাঁধছে প্রশ্ন ও সন্দেহ।
এ বিষয়ে ওমেরা এলপিজির প্রধান নির্বাহী শামসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাজারে প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় প্রতিটি কোম্পানি উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে এলপিজি গ্যাস বিক্রি করছে। তবে এভাবে চললে এ খাতে ধস নামবে। তাই ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় টিকে থাকা নিয়ে আলোচনা করছেন।’
বর্তমানে বাজার মূল্যের চেয়ে সিলিন্ডারপ্রতি ৭০-৮০ টাকা বাড়লে তারা ব্রেক ইভেন্টে থাকবেন বলে জানিয়েছে তিনি।
শনিবার থেকে দাম বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়ে সেনা এলপিজির বরিশালের পরিবেশক আজিম হোসেন জানিয়েছেন, এবার প্রতি সিলিন্ডারের দাম বাড়বে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। সবশেষ গত ১ জুলাই দাম বাড়ানোর পর পরিবেশকরা ৭৫০ থেকে ৭৭০ টাকা মূল্যে খুচরা বিক্রেতাদের দিচ্ছেন। ভোক্তারা কিনছেন ৮০০-৮২০ টাকায়। শনিবার থেকে দাম বাড়ানো হলে খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তাদের কাছে প্রতি সিলিন্ডার বিক্রি করবেন ৮৯০-৯০০ টাকায়। খুচরা বিক্রেতারা বিক্রয় রশিদ চায় না বলে তা দেয়া হয় না বলেও অপর এক প্রশ্নে জানান তিনি।
এলপিজি যমুনা (বেসরকারি) কোম্পানির বরিশালের পরিবেশক মো. শাহিন জানান, তার কোম্পানি গত ৩ আগস্টই জানিয়েছে দিয়েছে যে, গ্যাসের দাম বাড়বে। চলতি সপ্তাহেই হয়তো এ দাম বৃদ্ধি কার্যকর হবে। গত জুলাইয়ে গ্যাসের দাম সিলিন্ডারপ্রতি ৩০ টাকা বেড়েছিল। এবার হয়তো ৫০ থেকে ৭০ টাকা বাড়তে পারে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ এবং সরকারি উৎপাদন স্বল্পতার সুযোগ নিয়ে বেসরকারি এলপিজি ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের রক্ত চুষছেন। প্রতিটি বোতলের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। মাঠ পর্যায়ের বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ওজনে কম দেয়া ও টুইনিং (বোতলে হাওয়া ভরা) করার অভিযোগও রয়েছে।
ভোক্তরা মনে করেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় গ্রাহকদের ঠকিয়ে লাভবান হচ্ছেন উৎপাদক ও এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীরা।
এ ব্যাপারে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘যেকোনও খাতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি কোম্পানি থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র বিপরীত। বাংলাদেশে পুরো জ্বালানি খাত বেসরকারি এলপিজি মালিকদের নিয়ন্ত্রণে। বছরের পর বছর যাচ্ছে, কিন্তু সরকারি এলপিজি কোম্পানির সক্ষমতা ও বিপণন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন হচ্ছে না। সরকারি লোকজনও এই দুষ্ট চক্রের সুবিধা নেয়। আর তাতে করে মূলত জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এলপিজি ব্যবসায়ীরা আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ না দেয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছেন। কিন্তু আবাসিক খাতে সংযোগ দিলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়তো। অবৈধ ব্যবহারও হ্রাস পেতো। বর্তমানে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার গ্যাস ব্যবহার হওয়ায় বড় অংশের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।’