পুঁজি হারিয়ে হতাশ চামড়া ব্যবসায়ীরা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় চামড়া ব্যবসায়ীরা কয়েক বছর ধরে দাম না পেয়ে এবং বিভিন্ন ট্যানারিতে পুঁজি আটকে যাওয়ায় এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন।
বেশ কয়েক বছর লোকসানের কারণে অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কয়েকজন পুঁজি উদ্ধারে অন্যের চামড়ার আড়তে শ্রমিকের কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে চামড়ার বড় মোকাম শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর। এখানকার অন্তত ৫০ জন চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে এ পেশায় রয়েছেন মাত্র চারজন। বাকিদের সবাই পুঁজি হারিয়ে কেউ অন্য ব্যবসা বেছে নিয়েছেন, আবার কেউ অন্যের আড়তের শ্রমিক হয়ে হারানো টাকা উদ্ধারের স্বপ্ন দেখছেন।
এমনই এক ব্যক্তি ৪০ বছরের পুরোনো চামড়া ব্যবসায়ী নিবারন রবি দাস। তিনি জানান, ব্যবসায়ী জীবনে তিনি এক মৌসুমেই ১৩ লাখ টাকার চামড়া কেনাবেচা করেছেন।
২০১৭ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ লোকসান ৯০ হাজার টাকা। ভালোই চলছিল তার ব্যবসা। কিন্তু এরপর থেকেই তার পুঁজি ঢাকা ও নাটোরের ট্যানারি এবং মোকামগুলোতে আটকে যেতে লাগল। এখনো ৬ লাখ টাকা আটকে আছে।
তিন বছরে ১০ লাখ টাকা লোকসানের কারণে তিনি এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সংসার চালাতে এবং হারানো পুঁজি উদ্ধার করতে কাজ করছেন তার এক ব্যবসায়ী বন্ধুর চামড়ার আড়তে, একজন শ্রমিক হিসেবে।
নিবারন রবিদাস বলেন, অনিল রবি দাশ, তৌফিকুল ইসলামসহ আরও ছয়জন ব্যবসায়ী তার মতো লেবারের কাজে জড়িত। তারাও তার মতো স্বপ্ন দেখছেন শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি আটকেপড়া টাকা উদ্ধারের।
চামড়া ক্রেতা আবদুর রাজিব জানান, তিনি ও তার বন্ধু গত বছর লোকসানের কারণে এবং এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে চামড়া কিনতে অনীহা ছিলেন। কিন্তু স্থানীয়দের চাপে পরে মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে কিছু চামড়া কিনেছেন। করোনার এ পরিস্থিতিতে পরিবহন ব্যবস্থা সমস্যা হওয়ায় তাদের বেশ কিছু চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। এরপরও বাকি চামড়া নাটোরে পাঠানোর পর এর মূল্য পাওয়া নিয়ে রয়েছেন সংশয়ে।
আড়তের মালিক জেম বিশ্বাস ক্ষোভের সঙ্গে জানান, অধিকাংশ ব্যবসায়ী চামড়া না কেনায় তিনি এ বছর গরু সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দরে ২ হাজার ৬০০ পিস এবং খাসি ৩৫ টাকা দরে ১২ হাজার পিস কিনেও সংশয়ে আছেন।
তিনি আরও জানান, দিন দিন চামড়া রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মোকামগুলোতে টাকা বাকি পড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের বেঁধে দেয়া রেটে ট্যানারিগুলো চামড়া না কেনায় জেলার সব চামড়া ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন।
তবে শাহ নেয়ামতুল্লাহ এতিমখানার প্রধান কর্মকর্তা রশিদুল ইসলাম বলেন, এতিমখানায় জমাকৃত গরুর চামড়া প্রতি ৫৫০ টাকা ও খাসির চামড়া প্রতি ৪৫ টাকা দরে নিলামে বিক্রি করেছেন। মোট গরুর চামড়া ৪৪৭ পিস ও খাসির চামড়া ১ হাজার ৮১৯ পিস নিলামে বিক্রি হয়েছে।
চককীর্তি, ধাইনগর ও নয়ালাভাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানান, গরুর চামড়া প্রতি ২০০ টাকা ও খাসির চামড়া প্রতি ২৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার অনেক ব্যক্তি ও মৌসুমী ব্যবসায়ী চামড়ার মূল্য এবং কোনো ক্রেতা না পেয়ে কেউ মাটিতে পুঁতে ফেলেছে আবার অনেকে নদীতে ফেলে দিয়েছে।
অন্যদিকে শিবগঞ্জের কাপড় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলী রিপন জানান, চামড়া বিক্রি করতে না পেরে তার ও প্রতিবেশীর ৭টি চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেন।
এ ব্যাপারে চামড়া ব্যবসায়ী সাদিকুল ইসলাম ক্ষোভের সঙ্গে জানান, প্রায় দেড়শ ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছে।
যারা ব্যবসাটি ধরে রেখেছে তারাও ধুঁকে ধুঁকে মরছে। তাই চামড়া ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে তিনি সরকারকে চামড়ার উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করে সে মূল্যে চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের নিশ্চয়তার পাশাপাশি বিদেশে কাঁচা চামড়া রফতানির মাধ্যমে চামড়ার মূল্য বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।