এখন প্রতি ৩ দিনেই ১০ হাজারের বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুহার: ড্যাব সভাপতি

0

গত ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর চার মাস হতে চলেছে। এই চার মাস করোনা রোগ, এর লক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ।

গতকাল বুধবার করোনা ভাইরাস নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে হারুন বলেন, এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ধরনের ভাইরাস হলেও এই ভাইরাসের মানুষকে মেরে ফেলার শক্তি রয়েছে। ৮০ ভাগ লোকের ক্ষেত্রে কোন লক্ষণ তেমনটা দেখা যায় না। মাত্র ২০ ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা যায়। এই ২০ ভাগের মধ্যে শতকরা ৫ ভাগের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়। আর মাত্র দুই ভাগের অক্সিজেনের দরকার হয়।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সাধারণত যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলো- জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ও শরীর ব্যথা। এর বাইরে পা ফুলে যাওয়া, ফোসকা পড়া, ডায়রিয়া হচ্ছে। এগুলোও লক্ষণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

হারুন বলেন, বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। প্রতি তিন দিনে ১০ হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুহার। এখনও করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে যায়নি। 

তিনি বলেন, গত চার মাস পর সংক্রমণের যে হার দেখা যাচ্ছে তা উদ্বেগজনক। করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার প্রথম ৫৮ দিনে ১০ হাজার সংক্রমণ হয়েছে। এর ১১ দিন পর আবার ১০ হাজার হয়। এরপর ৭, ৬, ৫, ৪ এবং সর্বশেষ তিনদিন পরপর করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১০ হাজার করে।

ড্যাবের এই সভাপতি বলেন, শুরু থেকে ব্যাপক হারে টেস্ট হলে রোগীর সংখ্যা বাড়তো। কিন্তু তা হয়নি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে বাংলাদেশ টেস্টের বিষয়ে পিছিয়ে রয়েছে। তারা বেশি বেশি করে টেস্ট করার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু দেশে বর্তমানে টেস্ট হচ্ছে কম। কি কারণে কম হচ্ছে তা নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে না। অনেক কথা বললেও বাস্তবে তেমন কাজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। একের পর এক হাসপাতাল ঘুরে মানুষ ভর্তি হতে না পেরে মারা যাচ্ছে। সরকারের তরফে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নেওয়া হচ্ছে না। মোট কথা সরকারের ব্যবস্থাপনা দুর্বল ও চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। জনগণের মাঝেও সচেতনতার অভাব। জনগণ এমনই হবে তবে তাদেরকে আইন মানতে বাধ্য করার দায়িত্ব সরকারের।

তিনি বলেন, প্রথমে বলা হয়েছিল বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে কম বয়সী মানুষও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে ব্যতিক্রমও আছে। রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা মানুষে মানুষে ভিন্নতা আছে।

যেমন ৪০ বছর বয়সের একজন মানুষ যার আগে থেকে অন্য কোন জটিল রোগ আছে তারা মারা যাচ্ছেন। আবার ৬০ বছর বয়সের একজন রোগী যার অন্য কোন সমস্যা নেই তিনি বেঁচে যাচ্ছেন।

ড্যাব সভাপতি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থায় ধস নেমেছে। করোনার বাইরে অন্য কোন রোগীর চিকিৎসা খুব একটা হচ্ছে না। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মা ও শিশুরা।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তারা মনে করছে করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত প্রায় ৪ লাখ ৫৯ হাজার মা ও শিশুর জীবন হুমকির মুখে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। ৬ মাসের মধ্যে সেখানে ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। জন হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণার বরাত দিয়ে ইউনিসেফ এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com