মিঠু সিন্ডিকেটের হোতা, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা, আলোচিত মিঠু সিন্ডিকেটের হোতা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ অতিরিক্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলামকে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। জানা গেছে, স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনের অংশ হিসেবে তাকে এ বদলি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে দুর্নীতির যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে তার প্রথম সাড়িতে ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে মো. সিরাজুল ইসলামকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হলো।
জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও তদন্ত করে কেনাকাটায় দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপরই জড়িতদের ধাপে ধাপে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে মো. সিরাজুল ইসলামকে সরানো হয়েছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) বিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহ গত ৩০ মে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতেও অতিরিক্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম এর দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহ। শহীদউল্লাহ চিঠিতে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পিএস তাকে মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার ছেলের ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বলে তাকে জানান ওই দুই কর্মকর্তা।
ওই প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার মিঠুর কথা উল্লেখ করে পরিচালক বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই দুই কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পিএস) মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেডসহ তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখে। ওই কোম্পানির পাঠানো তালিকা ও মূল্য অনুযায়ী দ্রব্যাদি কেনাকাটা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তিনি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং ক্রয় তালিকায় সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করেননি। এতে মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেডসহ সহযোগী ঠিকাদাররা ক্ষুব্ধ হন।
পরিচালক বলেন, সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কভিড হাসপাতালের আইসিইউর জন্য ডিপিএম পদ্ধতিতে কিছু চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ক্রয়ের চাহিদা দেয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তারা মৌখিকভাবে মেডিটেক ইমেজিংয়ের কাছ থেকে ওইসব সামগ্রী ক্রয়ের নির্দেশ দেন। কিন্তু মেডিটেক ইমেজিংয়ের যন্ত্রপাতি ছিল নিম্নমানের এবং দাম বেশি। ফলে তারা বাদ পড়ে। এতে মিঠু বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
এদিকে অতিরিক্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলামসহ গতকাল (সোমবার ৮ জুন) চার অতিরিক্ত সচিবকে বদলি করে আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরা হচ্ছেন- বিসিএস প্রশাসন একাডেমির এমডিএস (মেম্বার ডিরেক্টিং স্টাফ) নিয়োগ পেয়েছেন বিয়ামের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব উল আলম। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব মো. ইসমাইল হোসেনকে ভূমি মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলামকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। আর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মহিবুর রহমানকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বদলি করা হয়।