ক্যাসিনো খালেদের বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচারের আরেকটি মামলা
ক্যাসিনোকাণ্ডে বহিষ্কৃত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে আরেকটি মামলা হয়েছে। গত রবিবার রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মো. ইব্রাহিম হোসেন। গতকাল সোমবার সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। ক্যাসিনোকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তারের আট মাস পর খালেদের বিরুদ্ধে এ মামলা হলো। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
রবিবার করা মামলায় খালেদের সঙ্গে আইয়ুব রহমান, আবু ইউনুস ওরফে আবু হায়দার, দীন মজুমদার নামে তিন ব্যক্তিসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা অর্থ পাচারে খালেদকে সহযোগিতা করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার বাদী পরিদর্শক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের পর সিআইডি তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে খালেদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও চাঁদাবাজির বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর সিআইডির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। এ বিষয়ে খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ ও আরও তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, কমলাপুর, মতিঝিল, খিলগাঁও, সবুজবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মাছের হাট, পশুর হাট এবং গণপরিবহন ও সিএনজি স্টেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজি করতেন খালেদ। শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করার পর তা বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা উপার্জন করেন। এ ছাড়া মতিঝিলের ফকিরাপুলে ইয়ং ক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো কারবার চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন। এসব টাকা দিয়ে তার নামে ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপারস লিমিটেড, অর্ক বিল্ডার্স ও অর্পণ প্রোপার্টিজ নামে তিনটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। অবৈধ আয়ের টাকা দিয়ে গুলশানে একটি, শাহজাহানপুরে একটি, মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া হাউজিংয়ে একটিসহ মোট তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি; যা তার নামে রয়েছে। এ ছাড়া তার নামে একটি প্রাডো ও একটি নোয়া গাড়ি রয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, খালেদ মাহমুদ অবৈধ অর্থ জনৈক আইয়ুব রহমানকে ব্যবহার করে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। তদন্তকালে খালেদের কাছ থেকে মালয়েশিয়ার মাই ব্যাংকের একটি, আরএইচবি ব্যাংকের একটি, সিঙ্গাপুরের ইউওবি ব্যাংকের একটি, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংকের একটিসহ মোট চারটি এটিএম ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়। ২০১৮ সালের মে মাসে মালয়েশিয়ার মাই ব্যাংক ও আরএইচবি ব্যাংকে হিসাব খোলেন মাহমুদ। এই দুটি ব্যাংকের মালয়েশিয়ায় কেএলসিসি শাখায় ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট টাকা জমা দেখা যায় ২৫ লাখ ৫৭ হাজার মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। দুটি হিসাবে ২২ লাখ ৫৭ হাজার রিঙ্গিত এবং দুটি এফডিআরে ৩ লাখ রিঙ্গিত পাওয়া যায়। তার জব্দকৃত পাসপোর্টে মালয়েশিয়ার একটি ভিসা রয়েছে। ভিসাটিতে এমওয়াইএস এমওয়াই টু হোম লেখা রয়েছে, যা সেকেন্ড হোম হিসেবে পরিচিত। তার সেকেন্ড হোম ভিসা প্রমাণিত হয়েছে। সেকেন্ড হোম ভিসার পূর্বশর্ত হলো মালয়েশিয়ার ব্যাংকে তার নামে এফডিআর রয়েছে।
সিআইডির পক্ষ থেকে গতকাল বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরে খালেদ অর্পণ ট্রেডার্স পিটিসি লিমিটেড নামে একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিপণনী প্রতিষ্ঠান খোলেন। যার রেজিস্ট্রেশন হয় ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর। ওই মাসেই সিঙ্গাপুর ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে তার মালিকানাধীন কোম্পানির নামে একটি হিসাব খোলেন। ওই অ্যাকাউন্টে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ লাখ ৫ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার জমা থাকার হিসাব পাওয়া যায়। এসব টাকা বাংলাদেশ থেকে আরেক আসামি আইয়ুব রহমানের মাধ্যমে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে বলে উঠে এসেছে তদন্তে। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংকে ২০১৮ সালে খালেদের নামে খোলা অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ থাই বাথ জমা রাখার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব টাকাও আইয়ুব রহমানের মাধ্যমে হুন্ডিতে পাচার করা হয়েছে। তিন দেশের চার ব্যাংকে মোট ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করেছেন খালেদ।
সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, আসামি খালেদের পাসপোর্টে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও চীনের ভিসা রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে তার ৭০ বার ভ্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকা ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জনের দায়ে মতিঝিল ও গুলশান থানায় মাদক, মানি লন্ডারিং, দুদক আইনেসহ ছয়টি মামলা তদন্তাধীন।