নির্যাতনে কলেজছাত্রের কিডনি বিকল করার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে
যশোরে পুলিশের বিরুদ্ধে এক কলেজছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ওই ছাত্র সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে। তার নাম ইমরান হোসেন।
পরিবারের অভিযোগ, পুলিশি নির্যাতনে কিডনি বিকল হয়ে গেছে তার।
এ ঘটনায় যশোরের পুলিশ সুপার বলেন, তিনি ঘটনাটি শোনার পর পরই তদন্ত শুরু করেছেন। এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যদি কোনো পুলিশ সদস্য এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইমরান হোসেন যশোর সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের নিকার আলীর ছেলে।
ইমরানের ভাষ্য, তিনি সদর উপজেলার কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বুধবার সন্ধ্যার দিকে তিনি পাশের সলুয়া বাজার এলাকা থেকে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে একই এলাকার আরেকটি ছেলে ছিল। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে স্থানীয় সাজিয়ালি ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা তাদের থামায়। এরপর সঙ্গে থাকা ছেলেটির ব্যাগ তাল্লাশি করে পুলিশ।
ইমরান জানায়, এ সময় ভয়ে তিনি দৌড় দেন। পুলিশ ধাওয়া করে তাকে ধরে বেধড়ক মারধর করলে তিনি জ্ঞান হারান। পরে একটি ফার্মেসিতে তার জ্ঞান ফেরে। এসময় পুলিশ তার পকেটে গাঁজা দিয়ে আটকের কথা বলে।
তার দাবি, এরপর ইমরানের বাবাকে ফোন দিয়ে তাকে ছাড়তে ২৫ হাজার টাকাও দাবি করেন এক পুলিশ সদস্য। পরে ছয় হাজার টাকা নিয়ে তারা ইমরানকে ছেড়ে দেয়।
মারধরের ঘটনা কাউকে বললে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে ফের পেটানোর হুমকি দেয় বলেও ইমরানের দাবি।
তিনি বলেন, ‘ভয়ে আমি কাউকে কিছু বলিনি। তিন দিন পেটের ব্যথায় মরে যাচ্ছি বলে মনে হয়েছে। সহ্য করতে না পেরে মা-বাবাকে নির্যাতনের বিষয়টি জানাই। এরপর তারা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এখন যেন আমার পেটের মধ্যে সব ছিড়ে যাচ্ছে। কোনো ওষুধ শান্তি দিতে পারছে না। আমি মনে হয় বাঁচব না’।
ইমরানের মা বুলবুুল বেগম বলেন, ‘এভাবে কেউ কাউকে নির্যাতন করতে পারে? ছেলেটারে শেষ করে ফেলেছে। ওর চিকিৎসা কীভাবে করাব? বাঁচবে কি না জানি না। আমি এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি চাই।’
ইমরানের বাবা নিকার আলী বলেন, ‘আমার ছেলেটা লেখাপড়া করে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন, কোনো খারাপ কাজে নেই সে। অথচ তাকে ধরে নির্যাতন করা হলো। তার পেটে ও কোমরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ডাক্তার বলেছে, তার অবস্থা খুব খারাপ। আমি এই ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায়বিচার ভিক্ষা চাই।’
ইমরানের চিকিৎসক যশোর জেনারেল হাসপাতালের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. উবায়দুল কাদির উজ্জ্বল বলেন, ‘ইমরানের দুটি কিডনির ফাংশন খুবই খারাপ। স্বাভাবিক অবস্থায় কিডনির ক্রিটেনিন ১ দশমিক ৪ থাকার কথা; কিন্তু ইমরানের তা ছিল ৮ দশমিক ৮। আজ এটা আরো বেড়েছে। দ্রুত তার ডায়ালিসিস শুরু করতে হবে এবং আজই সেটা করা হবে। তবে বলা যাচ্ছে না, সে রিকভারি করবে কি না। তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।’
এ বিষয়ে সাজিয়ালি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মুন্সি আনিচুর রহমান বলছেন, ঘটনার দিন সকালে তিনি জরুরি কাজে যশোর কোতয়ালি থানায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পে ফেরেন। এসে জানতে পারেন এএসআই সুমারেশ সাহা, এএসআই সাজদার রহমান ও চার কনস্টেবল ওই কলেজছাত্রকে আটক করেছিল। কিন্তু সে অসুস্থ হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে তার বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ইমরানকে ছাড়তে কোনো টাকা-পয়সার লেনদেন হয়নি বলে দাবি করেন ক্যাম্প ইনচার্জ। তার কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে বলেও জানানি তিনি।
যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ আশরাফ হোসেন বলেন, বিষয়টি জানার পর তিনি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন। ওই ছেলেটি অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত কি না সে খোঁজও নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে ইনফরমেশন পাওয়া যাচ্ছে, তা হলো, পুলিশের কাছে তথ্য ছিল ওই রাস্তা দিয়ে মাদকদ্রব্য আসবে। সেই অনুযায়ী ওই ছেলে দুটোকে আটক করেছিল পুলিশ। ওই সময় ইমরান নামে ছেলেটি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পড়ে গিয়ে সে আঘাত পায়। পিছু ধাওয়াকারী পুলিশ সদস্যরা তাকে কাদার মধ্যে থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, করোনাকালে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যত কমসংখ্যক মানুষকে গ্রেপ্তার করা যায়, ততই ভালো। এমনকি কোনো ব্যক্তির শরীরের কাছাকাছি যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। ছেলেটির কাছে টাকা দাবির কথাও শুনেছি। যদি কোনো পুলিশ সদস্য টাকা লেনদেন বা শারীরিক নির্যাতনে জড়িত বলে প্রমাণিত হন, তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।