আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া : ইশরাক

0

বিএনপি চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। বিশ্বের সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। তার আলোচনায় উঠে এসেছে ভারত-চীন উত্তেজনা, পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক একং বাংলাদেশের জন্য আঞ্চলিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত এসব বিষয়। এ ছাড়া তিনি কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার ঘটনা নিয়েও।

ইশরাক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটাতে পুলিশের পাশবিক নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। পুলিশ সদস্য দীর্ঘসময় পা দিয়ে চাপ দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে। প্রায় আট মিনিট তাকে ওই অবস্থায় রাখার পর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি বারবার বলার চেষ্টা করছিলেন যে, তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। তখন অন্য পুলিশ সদস্যরা নির্বিকার থাকেন। এরকম জঘন্য বর্ণবাদী এবং পুলিশি নির্যাতন গোটা পৃথিবীর জনগণ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি, বিশেষ করে উত্তর আমেরিকার জনগণ।’

তিনি বলেন, ‘এর ফলে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে তা দেরিতে হলেও উত্তর আমেরিকার প্রশাসন এবং গোটা পৃথিবীকে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। এখানে দুটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত বর্ণবাদ ও দ্বিতীয়ত পুলিশি নির্যাতন। ফলে যে বিক্ষোভ আমেরিকাজুড়ে শুরু হয়েছে, তা যথার্থ বলে আমি মনে করছি। যেকোনো নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণ যতদিন রুখে না দাঁড়াবে ততদিন এর অবসান ঘটবে না।’

ইশরাক বলেন, ‘আমি এই বিক্ষোভের পুরোপুরি সমর্থন করছি তবে বিক্ষোভের নামে কিছু দুষ্কৃতকারীরা যে লুটপাট চালাচ্ছে তা কঠোরভাবে দমন করা উচিত বলে আমি মনে করছি। কারণ, এই লুটপাটকারীরা বর্ণবাদ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে ভিন্নখাতে ঠেলে দিচ্ছে। আমি আশা করি, এই জাগরণ থেকে পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় বর্ণবাদ ও পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণ রুখে দাঁড়াবে। বিশেষ করে ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ভারত, চীন ও মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর একই কায়দায় নিপীড়ন, পুলিশি নির্যাতন ও হত্যা চালানো হচ্ছে, যার বিরুদ্ধে সমগ্র পৃথিবীকে এখনই বলিষ্ঠভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

ভারত ও চীন পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভারত ও চীন এশিয়ার দুই পরাশক্তি। এই দুই দেশের মধ্যে বিশাল লম্বা বর্ডার রয়েছে এবং দীর্ঘকাল ধরে একাধিক বর্ডারে তাদের মধ্যে বিশাল এলাকা অনিষ্পত্তি অবস্থায় রয়েছে। ২০১৭ সালে আমরা দেখেছি ভারত এবং চীন ডোকলাম সীমান্তে মুখোমুখী অবস্থায় থেকে প্রায় যুদ্ধ প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। এরই মধ্যে মোদি সরকার ফের ক্ষমতায় আসার পর ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিশেষ আইন যা আর্টিকেল ৩৭০ নামে বহুল পরিচিত, সেটিকে প্রায় একতরফাভাবে বাতিল করে। এই সিদ্ধান্ত খোদ কংগ্রেস পার্টি, জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল, পাকিস্তানসহ অন্যান্য অনেক দেশ প্রত্যাখ্যান‌‌ করে ও নিন্দা জানায়। অবশ্য মোদি সরকার এই সিদ্ধান্তকে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উন্নয়নের প্রয়োজনে করা হয়েছে বলে দাবি করছে।’

ইশরাক বলেন, ‘পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে একটি কৌশলগত সুসম্পর্ক রয়েছে। চীন, পাকিস্তানের অবকাঠামো উন্নয়নে বিশাল বিনিয়োগ করেছে। তাছাড়া তাদের মধ্যে সামরিক চুক্তি, যৌথ সামরিক মহড়া ও যৌথভাবে জে-এফ ১৭ যুদ্ধবিমান তৈরি করার কাজ চলমান। সার্বিকভাবে বোঝা যাচ্ছে চীন ও পাকিস্তান একটি গভীর অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক বজায় রাখছে। গত বছর কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তান ও ভারতের বিমানবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং পাকিস্তান এয়ারফোর্স ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। পরবর্তীতে তারা শান্তির নিদর্শন হিসেবে সেই বিমানের পাইলটকে অক্ষত ফেরত দেয়। এই ঘটনার পর ভারতীয় বিমানবাহিনী ফ্রান্স থেকে রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার প্রক্রিয়া দ্রুত করে। তাছাড়া চীনের সঙ্গে তাদের বর্তমান দ্বন্দ্ব ভারতকে উত্তর আমেরিকার কাছাকাছি ঠেলে দিচ্ছে। যদিও অতীতে উত্তর আমেরিকা পাকিস্তানকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ফাইটার জেট ও অন্যান্য সামরিক সহযোগিতা দেয়।’

তিনি বলেন, ‘সবমিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে, একটি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার দিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ধাবিত হচ্ছে। এই আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির অংশ হিসেবে নেপাল ও ভূটান দারুণভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।’

ইশরাক বলেন, ‘বলা মুশকিল আগামী দিনগুলোতে আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে। আমরা দেখেছি বাংলাদেশ ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পারমাণবিক অস্ত্রে শক্তিশালী দেশ এবং বাংলাদেশের জন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা সমীচীন বলে মনে করছি।’

তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। এখন বাংলাদেশের উচিত হবে খুব কৌশলী কূটনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। যাতে করে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে এবং নিজেই একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।’

‘বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু হতে পারে না। আমাদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, যা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছি। এখন আমাদের প্রজন্মের দায়িত্ব আমাদের ভূখণ্ডকে রক্ষা করা ও এর নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এটি একমাত্র সম্ভব বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতসহ অন্যান্য দেশের হস্তক্ষেপ পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে শুধু বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা। এর জন্য প্রয়োজন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি ইনক্লুসিভ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে জনগণের প্রতি জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com