প্রবাসীকে ‘ক্রস ফায়ারের’ ভয় দেখিয়ে লাখ টাকা দাবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে এক প্রবাসীকে ক্রসফায়ার ও মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েক দফায় ওই টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী হারুন মিয়া।
এ ঘটনায় প্রবাসী হারুন মিয়া গত ৩০ মে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন, আখাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান, হুমায়ূন কবির, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এসএসআই) খোরশেদ, সাদা পোশাক পরিহিত পুলিশ সদস্য সোহাগ ও অজ্ঞাতনামা নারী পুলিশ।
পুলিশ সুপারের কাছে দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া পৌর এলাকার মসজিদপাড়ার (উত্তর) বাসিন্দা মো. হারুন মিয়া দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। তিনি আবারো প্রবাসে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। হারুন মিয়ার প্রতিবেশী কালাম মিয়ার স্ত্রী চিকুনী বেগম তার মেয়েদের নিয়ে মাদক বিক্রি করেন। মাদক বিক্রিতে বাধা দেয়ায় হারুন মিয়ার ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি-ধামকী দেন চিকুনী বেগম।
গত ২৫ মে রাত দেড়টার দিকে এসআই মতিউর ও এসআই হুমায়ূন, এএসআই সোহাগসহ আরো দুইজন পুলিশ সদস্য চিকুনী বেগমকে তার বাড়ি থেকে আটক করেন। পরবর্তীতে চিকুনী বেগম ও তার মেয়েদের কথায় পুলিশ সদস্যরা হারুনের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালায়।
অভিযোগে বলা হয়, তল্লাশির নামে হারুনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়রানি করেন পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র উলট-পালট করে নাজেহাল অবস্থা তৈরি করেন। এ সময় হারুন তার প্রতিবেশীদের ডেকে আনেন।
এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা হারুনের ঘরে মাদক না পেয়ে ঘরে থাকা তার মা আয়েশা বেগমের পেনশনের আট হাজার এবং ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আনা ৩০ হাজার টাকা নিয়ে নেন। এরপর হারুনকে মারধর করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে ভোর চারটার দিকে আবারো অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা হারুনের বাড়িতে এসে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের 0ভয় দেখিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন। এ সময় ঘটনাটি ৫০ হাজার টাকায় রফাদফা হয় এবং ওইদিন বেলা ১১টার মধ্যে টাকা পরিশোধ করার শর্ত দিয়ে ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে ক্রসফায়ার দেওয়া হবে বলে পুলিশ সদস্যরা হারুনের বাড়ি ত্যাগ করেন। এরপর কথামতো এসআই হুমায়ূনের কাছে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দেন হারুন।
এ সময় হারুন তার বৃদ্ধ মায়ের পেনশনের আট হাজার টাকা ফেরত চাইলে এসআই মতিউর আট হাজার টাকা ফেরত দেন। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা হারুনের কাছ থেকে দফায় দফায় ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
ভুক্তভোগী মো. হারুন মিয়া বলেন, আমার সাথে যে ঘটনা ঘটেছে আমি এর বিচার চাই। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে করো সাথে না ঘটে সেজন্য আমি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এসআই মতিউর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।
এসআই হুমায়ূন কবির তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা এবং তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্ত করো অভিযোগ প্রমানিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।