গঙ্গাচড়ায় এতিমখানার অর্থ লুটে ১৪ কোটি টাকার মালিক হায়দার
রংপুরের গঙ্গাচড়া এতিমখানার অর্থ লুট করে প্রায় ১৪ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন হাফেজ হায়দার আলী। তিনি অবৈধ রোজগারের মাধ্যমে গ্রামের বাড়ি কচুয়া ও রংপুর বিভাগীয় শহরে বিলাসবহুল ১০ কোটি টাকার ২টি বাড়ি বানিয়েছেন।
তার রয়েছে ৭ একর কৃষি জমিও। বাসার ফার্নিচার ও আসবাবপত্র আনিয়েছেন বিদেশ থেকে। অথচ এতিমখানাটির পরিচালক হিসেবে তিনি মাসে বেতন পান ৯ হাজার ৮০০ টাকা মাত্র।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রংপুরের গঙ্গাচড়ায় নোহালী ইউনিয়নের কচুয়া এলাকায় কাতার চ্যারিটেবল ফান্ডের সহযোগিতায় খোবাইব ইবনে আদি (রা:) এতিমখানাটি কোরআনের হাফেজসহ ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত এতিমদের শিক্ষা দেয়। এ এতিমখানার ছাত্র-ছাত্রীদের থাকা খাওয়া, ভরণপোষণ, শিক্ষক, কর্মচারীদের বেতনভাতা দাতা সংস্থা প্রদান করে।
দাতা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানে অনুদানপ্রাপ্ত ছাত্রের সংখ্যা ৩২৮ ও ছাত্রী ৯৫ জন। মোট শিক্ষার্থী ৪২৩ জন। প্রতি ছাত্রছাত্রীর ভরণপোষণের জন্য প্রতি মাসে ৩ হাজার ১০০ টাকা প্রদান করে দাতা সংস্থা। সে অনুযায়ী মাসে ভরণপোষণের জন্য প্রতিষ্ঠানটি পায় ১৩ লাখ ১১ হাজার ৩০০ টাকা।
কিন্তু এতিমখানার প্রকৃত ছাত্র ১৯০ জন ও ছাত্রী ৪০ জন। প্রকৃতপক্ষে ২৩০ জন শিক্ষার্থী ভরণপোষণের টাকা পেয়ে থাকে। অতিরিক্ত ১৯৩ জন শিক্ষার্থীর ভুয়া ভাউচার ও ভুয়া অ্যাকাউন্ট দেখিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নেয়া হয় ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ টাকা। যা এক বছরে ৭১ লাখ ৭৯ হাজার ৬০০ টাকা।
এছাড়াও হাফেজ হায়দার আলীর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিং, গাছ ও পুকুরের মাছ বিক্রি, পুরাতন মসজিদের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে নতুন মসজিদ তৈরি করে বিল ভাউচার জমা দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
নোহালী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ (টিটু) বলেন, অদৃশ্য কারণে যোগ্যতা না থাকার পরেও হাফেজ হায়দার আলী ২০১১ সালে এতিমখানাটির পরিচালকের দায়িত্ব পান। তারপর থেকে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে।
পৈতৃকভাবে বাবা আবদুর রাজ্জাক মিয়ার কাছ থেকে তার পাওয়া কৃষি জমি ২০ শতক মাত্র। হাফেজ হায়দার আলী এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে তার নিজ এলাকায় কৃষি জমি কিনেছেন ৭ একর যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। গ্রামের বাড়িতে কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ তলা বিশিষ্ট ৪ হাজার স্কয়ার ফুটের একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়ির আসবাবপত্র ও ফার্নিচার বিদেশ থেকে অর্ডার দিয়ে আনা, যার আনুমানিক মূল্য ৫০ লাখ টাকার উপরে।
রংপুরের অভিজাত এলাকা মেডিকেল মোড়ে প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের জমির ওপর সাত কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সেখানেও রয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকার দামি ফার্নিচার।
এছাড়া রংপুর শহরে আরও দুই কোটি টাকার মূল্যের জমি কিনেছেন তিনি। তিনি যে মোটরসাইকেলটিতে যাতায়াত করেন তার দাম প্রায় তিন লাখ টাকা। সব মিলে তার বিরুদ্ধে প্রায় ১৪ কোটি টাকা উপরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।
এতিমখানার পরিচালক হিসেবে হায়দার আলীর মাসিক বেতন ৯ হাজার ৮০০ টাকা। এতে তার এক বছরের বেতন আসে এক লাখ ১৭ হাজার ৬০০ টাকা, যা তার চাকরির বয়সের ৯ বছরে দাঁড়ায় ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৪০০ টাকা। এ বেতনে ১৪ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন কিভাবে সম্ভব?
এদিকে কাজলী বেগম নামের এক অভিভাবক কাতার চ্যারিটেবল ফান্ড বাংলাদেশ অফিসে অভিযোগ করেছেন, তার এতিম দুই মেয়ে রাবিনা ও মারজানা আক্তারের নামে ইসলামী ব্যাংকের রংপুরের ধাপ শাখায় ৩১ হাজার করে মোট ৬২ হাজার টাকা এলেও হায়দার আলী তাদের কাছ থেকে চেকে অগ্রিম সই নিয়ে মাত্র ২৪ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় দিয়েছেন এবং তাকে বলেছেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে পরিণাম খারাপ হবে।
কাজলী বেগমের মতো আরও অনেক অভিভাবকের অভিযোগ হায়দার আলীর বিরুদ্ধে জমা পড়লেও রহস্যজনক কারণে তার তদন্ত হচ্ছে না।
অভিযোগ সম্পর্কে হায়দার আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে অনেকেই ষড়যন্ত্র করে আসছে। শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা পেয়েছি। তা দিয়েই এসব সম্পদ করেছি।