পেট চলে কি করে ?

0

দাঁড়িয়ে ছিলাম মুরগীর দোকানে। অনুমান করারও উপায় নেই যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয় বলে কিছু আছে। গা ঘেঁষে দাঁড়ানো সবাই। একজনকে বলেই ফেললাম, একটু যদি সাইডে দাঁড়াতেন! দূরত্ব মেপে চলা খুব জরুরি! লোকটা মেজাজ হারালেন। বললেন, চলেন বাসায় বসে থাকি। খাওয়া লাগবেনা। কোন কিছু লাগবেনা। কীজন্য দূরত্ব রাখা লাগবে বুঝান আমাকে? গার্মেন্টস খুলছেনা? লোকজন আসা যাওয়া করছেনা? পেট চলে কি করে আমাদের? হিসাব রাখেন? চুপ রইলাম।

পেটের প্রশ্নে, রুটিরুজির প্রশ্নে বিতর্কে জড়ানো যায়না। তাইতো। কারো পেটের দায়িত্ব কি আমরা নিতে পেরেছি। ছুটি বাড়াচ্ছি আমরা। বলছি ঘরে থাকুন। অন্যদিকে গার্মেন্টস দিব্বি খোলা। শ্রমিকদের কাছে এখন আর করোনার ভয় নেই বললেই চলে। তারা খোলা বা বন্ধের খেলা মেনে নিতে নারাজ। তাদের চাকরিটাই সম্বল। তারা চায় তাদের সংসারটা চলুক কোনরকম।
দেশে যখন প্রথম(৮ই মার্চ) করোনা রোগী শনাক্ত হলো সবাই নড়েচরে বসলো। চোখে মুখে আতঙ্ক। গ্রাম থেকে একের পর এক ফোন। সবার একই প্রশ্ন- আজ কতজন আক্রান্ত হলো? এই ভাইরাস কবে দূর হবে?

দিন গড়াতে থাকলো। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকলো। মৃত্যুর মিছিলতো থামলোই না। কিন্তু মানুষজন ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে এটা নিয়ে আর ভয় পাচ্ছেনা কেমন যেন। পরিচিতদের ফোন এখনো আসে। তবে প্রশ্নের ধরণ ভিন্ন। একই কথা- হাতেতো টাকা পয়সা নেই রে। করবো কি! চলবো কি করে। হটস্পট নারায়ণগঞ্জে ইতিমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার পেরিয়েছে। মৃতের সংখ্যা অর্ধশতক ছুঁই ছুঁই। শতকে যেতে সময় লাগবেনা অনুমান করাটা কঠিন কিছু নয়। অমন হটস্পস্টে থেকেও মৃত্যু ভয়ে আতংকিত নয় আমার এক পরিচিতজন। সকালে ফোন দিয়ে বলছে- গার্মেন্টস খুলছে। আমাদের দোকানপাট খুলবো কবে? বললাম, না খোলাইতো ভাল। সাবধানে থাকতে পারলেন। বললেন, আমার সংসারটা চলবে কি করে? কেউতো আর ঘরে খাবার দিয়ে যায় না। আর দিক বা না দিক। এইটা কেমন লকডাউন? একদিকে খোলা অন্যদিকে বন্ধ! তার কথার উত্তর দিতে পারিনি। কারণ আমারদের স্কুল বন্ধ থাকলেও জিলাপির দোকান খোলা। এই মেকানিজম ধরার সাধ্য কার। যেখানে মসজিদের জামায়াতও ঝুঁকিপূর্ণ।

এমন ভাবনা এখন অনেকেরই। ছুটি বাড়ানো হচ্ছে শুধু। ছুটিতে মানুষ ঘুরবে বেড়াবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা বোঝার তারা বুঝে গেছেন। পরিস্থিতি আসলে কতটা স্বাভাবিক। রাজধানীর মিরপুর-১ এ গিয়েছিলাম। দেখে বোঝার উপায় নেই এদেশে করোনার আঘাত লেগেছে। অথচ ঠিকই দিনকে দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। তবে কেন এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা! নাকি আমরা করোনার মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবেই মেনে নেয়ার প্র্যাকটিসটা সেরে ফেলছি! কদিনপরতো শুরু আবার ডেঙ্গু।

যে দেশের গার্মেন্টস দিয়ে এত সচল অর্থনীতির চাকা, সেই চাকা যারা ঘুরায় তাদের কোন মুল্যায়ন আমরা করতে পারলাম না। বেতনের দাবিতে, চাকরি ছাঁটাই না করার দাবিতে তাদেরকে রাস্তায় নামতে হয়। একমাস বসিয়ে খাওয়ানোর সামর্থ্য আমাদের হলো না। গাদাগাদি করে লাইন ধরে তাদেরকে এখনো গার্মেন্টস মুখী হতে হয়। গ্রামেগঞ্জে বিকেলে হাট না বসলেও বসে খুব সকালে। তফাৎ এটুকোই। রাজধানীর চিত্র আরও ভয়াবহ।

গতকাল করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার দেয়া তথ্য থেকে জানা গেল- মোট আক্রান্তের ৮৩ দশমিক শূন্য ৭ ভাগই ঢাকার। এই সংখ্যা দেখেও ভয়হীন থাকার আদৌ কি কোন বিকল্প আছে? মারা গেছেন গতকাল পর্যন্ত ১৭৫ জন। জানি এ লেখা শেষ হতে না হতেই মৃতের ও আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭৯০ জনে(গতকাল পর্যন্ত)। উল্লেখ্য, যাদের টেস্ট করা হয়েছে তাদের সংখ্যা এটা। টেস্টের বাইরে রয়ে গেছেন অধিকাংশই। আমরা কি কোথাও ভুল করছি? বড়সর কোন ভুল? নাকি আমরা এখনো পর্যন্ত জীবন মৃত্যুর টেস্ট চালিয়ে অভিজ্ঞতা নিয়েই যাচ্ছি শুধু! কি হয় দেখা যাক। কিন্তু করোনাতো থেমে নেই। স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে সাংবাদিক পুলিশরাও এর বাইরে নয়। ইতিমধ্যে  জানা গেছে ৫৫ সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন এই ভাইরাসে। একজন সিনিয়র সাংবাদিকের মৃত্যুর খবর সবারই জানা। এর বাইরে স্বাস্থ্যকর্মীদের পরেই পুলিশের আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়ছে।
ফিরে আসি শুরুর গল্পে। বাসায় যখন মুরগী নিয়ে ফিরছিলাম এক মহিলা ফোনে কথা বলছিলেন- মা রে সবুর কর। দেশটা ভাল হোক। কাজ বাজ আবার শুরু হোক। এখন যে কারো কাছে টাকা ধার করবো সেই উপায়ওতো নেই। আল্লাহ মালিক ছাড়া আমাদের পাশে কে আছে বল?
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফোন রাখলেন মহিলা। অনুমান করতে পারি- কি হতে যাচ্ছে মধ্যবিত্তদের অবস্থা…

এক মাসের লকডাউনে এরই মধ্যে চাপে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে চাপ পড়বে অর্থনীতিতে। এ অবস্থায় সরকারের নেয়া উদ্যোগে সুশাসন নিশ্চিত না হলে ঝুঁকিতে পড়বে করোনা পরবর্তী অর্থনীতিও।
সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে পিপিআরসি ও বিআইজিডি জানায়, করোনা মহামারীতে দিন আনে দিন খায় এমন প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের আয় বন্ধ হয়েছে। পরিবারের ব্যয়ভার বহনে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্তকেও। কদিন পরের অবস্থা কি দাঁড়াবে আল্লাহ মালুম…

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com