গণমাধ্যম নয় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করুন: টিআইবি

সরকারকে গণমাধ্যম নয়, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। 

রবিবার বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২০ উপলক্ষে  শনিবার পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলে সংস্থাটি। 

টিআইবি জানায়, নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার ও সরকারের গণতান্ত্রিক জবাবদিহির জন্য গণমাধ্যমের অবাধ ও মুক্ত ভূমিকা পালনে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। বিশেষ করে কোভিড-১৯ উদ্ভূত জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় নাগরিকদের তথ্যপ্রাপ্তি ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতে সংকটকালীন সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত ও স্বাস্থ্যসুরক্ষার পাশাপাশি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। 

বিবৃতিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ সংকটে ত্রাণ বিতরণে জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের একাংশের দুর্নীতি ও তার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশের সংশ্লিষ্টতার রয়েছে। এক্ষেত্রে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্নভাবে বাধা, হয়রানি ও নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ অপপ্রয়োগ হচ্ছে। এতে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নিবর্তনমূলক নজরদারি প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা, হুমকি-ধমকির মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত রাখা ও সাংবাদিকদের সেল্ফসেন্সরশিপে বাধ্য করার ঘটনা ঘটছে। এতে গভীর হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। 

টিআইবির মতে, চলমান দুর্যোগের কার্যকর মোকাবেলার স্বার্থে এ আত্মঘাতী চর্চা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস অন্য যে-কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কোভিড-১৯ মহামারীকে দুর্নীতির মহোৎসবে পরিণত করার পাঁয়তারায় যারা লিপ্ত তাদের অশুভ তৎপরতা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম শক্তি হতে পারে মুক্ত গণমাধ্যম। শুধু স্থানীয় পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ্র করে অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ নয়, এই দুর্যোগের প্রেক্ষিতে জরুরিভিত্তিতে  প্রয়োজনীয় বহুমুখী সরকারি ক্রয় ও বিতরণ কার্যক্রমে বিভিন্ন প্রকার যোগসাজস ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের সম্পদ বিকাশের সুযোগ গ্রহণকারীদের নিবৃত্ত করতে তথ্যের অবাধ প্রকাশের বিকল্প নেই। আর এক্ষেত্রে সংবাদকর্মীদের অবারিতভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যর্থতা আত্মঘাতী হবে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ বা হয়রানি নয়, বরং দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করুন।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের গণমাধ্যম নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। করোনা দুর্যোগেও এর ব্যতিক্রম হয়নি বরং অভাবিত এ সংকটে জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করেই নাগরিকদের বস্তুনিষ্ঠ তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতে ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ফ্রন্টলাইনে গণমাধ্যমকর্মীরা সাহসী ভূমিকা পালন করছেন। অনেকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২০ এর প্রতিপাদ্য ‘ভয় বা পক্ষপাতিত্ববিহীন সাংবাদিকতা’-এর যথার্থ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। তাদের আমরা অভিনন্দন জানাই, এবং গণমাধ্যমকর্মীদের এ সাহসী ভূমিকা অব্যাহত রাখতে স্বাধীনভাবে কাজ করার উপযোগী পরিবেশ ও এর কর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা ও নিয়মিত বেতনভাতার পাশাপাশি আপদকালীন ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’