‘আইডি কার্ড আছে, কই কেউ তো সাহায্য দিতে আহে না’

0

রাজধানীর চকবাজার থানার অদূরে শনিবার বিকেলে একজন বোরকা পরিহিত নারীকে জনশূন্য রাস্তায় বসে থাকতে দেখা যায়। তার পাশ থেকেই বোরকা পরিহিত আরেক বৃদ্ধা নারী তাকে ওখান থেকে উঠে অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য ধমকাচ্ছিলেন। তখন বসে থাকা ওই নারী মৃদুস্বরে বলছিলেন, ‘জায়গাতো কারও কেনা না, আপনি কেন এমন করছেন। দরকার অইলে আপনেও পাশে বহেন।’

এবার বৃদ্ধা আরও জোরে ধমকে বলে ওঠেন, ‘গত ৩০ বছর যাবত এই জায়গায় আমি বসি, কথা না বাড়াইয়া সামনে গিয়া বহো।’

প্রায় জনশূন্য রাস্তায় কী নিয়ে ওই বৃদ্ধা ক্ষেপেছেন তা জানতে এ প্রতিবেদক এগিয়ে গেলে প্রথমে তিনি কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চলে যেতে উদ্যত হন। বৃদ্ধার পূর্ব পরিচিত চকবাজারের ফুটপাতের এক ফল ব্যবসায়ী বৃদ্ধাকে ডেকে বলেন, ‘উনি মিডিয়ার লোক। কোনো কথা বলার থাকলে বলতে পারো।’

suffering

এবার বৃদ্ধা এগিয়ে এসে স্বতস্ফূর্তভাবে জানান, তিনি লালবাগের খাজে দেওয়ান প্রথম লেনের বাসিন্দা, নাম ফর্সা বেগম। বয়স ষাটোর্ধ্ব। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই ছেলে ও চার মেয়ের মুখে আহার তুলে দিতে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চকবাজারেই ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে গত রোজায় মারা গেছেন। চার মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আরও দুই মেয়েকে ভিক্ষার টাকায় মাদরাসায় পড়াতেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে মেয়েদের মাদরাসা ছুটি। এখন দুই মেয়ে ও ছেলে তার সাথেই থাকছেন।

গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চকবাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন তিনি। দোকানপাট বন্ধ ও মানুষের যাতায়াত না থাকায় এখন আর ভিক্ষাও পান না। আজ সারাদিনে সামান্য কিছু টাকা পেয়েছেন। তিনি নিয়মিত যে জায়গায় বসতেন সে জায়গায় অপরিচিত এক নারী এসে বসে পড়ায় ক্ষেপেছেন বলে জানান।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ফর্সা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শুনি সরকার গরিব মাইনষেরে সাহায্য করতাছে। আমার তো আইডি কার্ড আছে, কই আমাগো কাছে তো কেউ সাহায্য নিয়া আহে না। সরকারের কোটি কোটি টাকার সাহায্য তাহলে কারা পায়?’

অদূরেই দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছিলেন এক রিকশাচালক। কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন নামের এই রিকশাচালক জানান, করোনার কারণে রাস্তায় মানুষের যাতায়াত একেবারে কমে যাওয়ায় তার আয়-রোজগার একদম নেই। সকাল থেকে মাত্র ১০০ টাকা আয় হয়েছে। রিকশার গ্যারেজের জমা ১০০ টাকা। এই ১০০ টাকায় তিনি কি রিকশার গ্যারেজ মালিককে দেবেন নাকি বাজার সদাই করবেন তা বুঝতে পারছেন না।

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাসায় গেলে এখন বউও বিশ্বাস করে না যে, এত কম ইনকাম অইছে, জিগায় ইনকাম এত কম কেন?’

সরকারিভাবে সাহায্য পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় রিকশা নিয়ে নামলে পুলিশে পিটায়, তাই কয়েক দিন আগে স্থানীয় কমিশনারের সাহায্যের জন্য যাই। কমিশনার অফিস থেকে জানায়, ত্রাণ শেষ অইয়া গেছে।’

এ প্রতিবেদকের কাছে মোশাররফ হতাশা ব্যক্ত করে জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে আয়-রোজগার না থাকায় দুই মেয়ে স্বামীসহ ঘরে উঠে বসেছে। নিজের স্ত্রী ছাড়াও বাকি চারজনসহ ছয়জনের সংসারের নিত্যদিনের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তার।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com