শিক্ষার্থীদের বুয়েটের উপাচার্য: তোমরা আল্টিমেটাম দিয়ো না বাবা
দাবির মুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম তাঁর কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের যে যে প্রশ্নের মুখোমুখি হন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল, আবরারের জানাজায় তিনি কেন হাজির হননি।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বিকেল ৫টার মধ্যে উপাচার্যকে শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির হতে সময় বেঁধে দিয়েছিল। দিনভর অপেক্ষার পর তিনি শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থিত হন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানতে চান, তিনি কেন তাঁর ‘সন্তানের’ জানাজায় হাজির হননি। জবাবে উপাচার্য বলেন, সে সময় তিনি মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন। শিক্ষার্থীরা পাল্টা প্রশ্ন করেন, জানাজা পড়তে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগে না। জবাবে তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যার দিকে ক্যাম্পাস থেকে পুলিশকে সরানোসহ নানা কাজে তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল।
শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা আল্টিমেটাম দিয়ো না বাবা! আমি তো বলেছি, তোমাদের দাবির সঙ্গে ইন প্রিন্সিপল আমি একমত।’ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্যের কথোপকথনটি প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের অনেকে একসঙ্গে কথা বলায়, স্পষ্ট শোনা যায়নি।আবরার ফাহাদ হত্যার ৪০ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির হন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। ছবি: তানভীর আহমেদ উপাচার্য: তোমরা চেয়েছ উপাচার্য আসুন, আমি এসেছি তোমাদের কাছে।
শিক্ষার্থী: আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে। কালকে শেরেবাংলা হলে পুলিশ এসেছিল। কার অনুমতিতে?
উপাচার্য: এটা পারমিশনের কোনো ব্যাপার না।
শিক্ষার্থী: পুলিশ পুরো সেট আপ নিয়ে এসেছে।
উপাচার্য: না, ওদেরকে তো কোনো অ্যাকশন না নিতে বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থী: সন্ধ্যার দিকে আসছে, ভিডিও আছে। দাঙ্গা পুলিশ
উপাচার্য: পুলিশ আমার কন্ট্রোলে নেই।
শিক্ষার্থী: পুলিশ প্রভোস্ট স্যারের কন্ট্রোলে নেই, প্রক্টরের কন্ট্রোলে নেই, উপাচার্য স্যারের কন্ট্রোলে নেই। তাহলে পুলিশ কার কন্ট্রোলে আছে?
উপাচার্য: এটা মার্ডার কেস। ধরতে হবে লোকজনকে।
শিক্ষার্থী: দাঙ্গা পুলিশ কেন?
উপাচার্য: সে তো আমার আমার কন্ট্রোলে না। আমি তো ডাকি নাই।
আমি অনুরোধ করেছি…কিন্তু এটা তো মামলা। তোমরা ভিডিও ফুটেজ চেয়েছ, ভিডিও ফুটেজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমি দাঁড়াতে পারছি না।
শিক্ষার্থী: চেয়ার আছে স্যার, বসুন।
কালকে পুলিশ না ঢুকলে ধরত কীভাবে।
শিক্ষার্থী: দাঙ্গা পুলিশ কেন?
উপাচার্য: আমি ওদের সঙ্গে কথা বলব এ ব্যাপারে। আমি মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।
এটা তো পাবলিক ইউনিভার্সিটি। এখানে আমি নিজের ক্ষমতায় সবকিছু করতে পারি না। সরকারকে প্রতিটা ক্ষেত্রে বলতে হয়। আমি তোমাদের দাবির সঙ্গে একমত। ইন প্রিন্সিপল একাত্মতা প্রকাশ করছি। আমি তোমাদের সঙ্গে বসব। মোডালিটি ফিক্স করতে হবে।
শিক্ষার্থী: না, সবার সঙ্গে বসতে হবে।
উপাচার্য: সবার সঙ্গে বসলে হবে? তোমাদের প্রতিনিধি দাও আমাকে।
সমবেত শিক্ষার্থীরা: কোনো ক্লোজড ডোর মিটিং হবে না।
উপাচার্য: দুনিয়াভর কোথায় প্রতিনিধি ছাড়া হয় না। তোমরা সুযোগ পাবে।
শিক্ষার্থী: আমরা সাত-আটজন যাব, মিডিয়া থাকবে
না, মিডিয়া না।
উপাচার্য: আর কোনো কথা আছে। (তুমি আস, তোমাকে আমি বুকে জড়িয়ে ধরি)
আমি কথা দিচ্ছি তোমাদের স্বার্থ বিরোধী কোনো কাজ করব না। আজকে যেটা হয়েছে, সেটা আমি না থাকলে হতো না। এটা বুঝতে হবে তোমাকে। (অস্পষ্ট)
শিক্ষার্থী: আপনি কি আমাদের আলটিমেটামগুলো দেখেছেন?
উপাচার্য: আল্টিমেটাম দিয়ো না, বাবা। আমি দেখছি, ব্যবস্থা করছি।
শিক্ষার্থী: আমি দাবিগুলো পড়ে শোনাই।
উপাচার্য: আমি তো একবারেই বলে দিলাম, ইন প্রিন্সিপল আমি স্বীকার করি। এক কথায় বলে দিলাম। এক্সিকিউশনের পদ্ধতিগুলো তো লাগবে। আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলতে পারব না। তোমাদের যদি পছন্দ না হয়, তোমরা আবারও ইয়ে করতে পারবে। কোনো অসুবিধা হবে না।
শিক্ষার্থী: প্রতিটা দাবি পূরণে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া আছে। আমরা সকাল থেকে বসে আছি। আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
উপাচার্য: ১১ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।
শিক্ষার্থী: আমি দাবিগুলো পড়ব।
উপাচার্য: মাগো, তুমি আবারও একই জায়গায় যাচ্ছ।
শিক্ষার্থী: আমরা দাবি থেকে নড়ব না।
উপাচার্য: হলের প্রভোস্ট আমাকে জানাবেন, আমি ব্যবস্থা নেব।
শিক্ষার্থী: চল্লিশ ঘণ্টায় কেন আপনি একবারও সেখানে যান নাই? জানাজায় কেন যাননি। আপনার ছেলে মারা গেছে আপনি কেন যাননি?
উপাচার্য: আমি তখন মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গে আবারও দেখা করতে গেছি। পুলিশ সরানোর কাজগুলো করতে হয়েছে।