করোনার উপসর্গ নিয়ে তিন সপ্তাহে ২১৪ জনের মৃত্যু
দেশের করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। মৃত্যুর মিছিলও থেমে নেই। সরকারি তথ্যমতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২৯৪৮ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১০১ জনের। ওয়ার্ল্ড মিটারের তথ্য বলছে, গত ৪০ দিনে আক্রান্তের দ্রুততায় যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যকে ছাড়ালো বাংলাদেশ।
এদিকে সরকারি তথ্যের বাইরে করোনা পরীক্ষা ছাড়া মৃত্যু হয়েছে অনেকের। দেশের বিভিন্ন জায়গায় জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও পাতলা পায়খানায় গত ২২ দিনে ২১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রবি ও সোমবার ৯ জেলায় মারা গেছেন নয়জন। তারা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না, জানতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া বিনা চিহিৎসায় মারা গেছে প্রায় ২০ জন। এর আগে গত মার্চ মাসে করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
রাজশাহী : করোনা উপসর্গ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের সময় রোববার রাত আড়াইটার দিকে পথেই ওই নারীর মৃত্যু হয়। ওই নারীর বাড়ি উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার খড়পট্টি মহল্লায়।
বাগাতিপাড়া (নাটোর) : বাগাতিপাড়ায় জ্বর ও শ্বাসকষ্টে এক ভ্যানচালক মারা গেছেন। রোববার রাতে উপজেলার নওশেরা গ্রামে তিনি মারা যান। তার বাড়িসহ আশপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল জানান, তার নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পাঠানো হবে। পরীক্ষার ফলাফল না-আসা পর্যন্ত ওই গ্রাম লকডাউন থাকবে।
শরীয়তপুর : জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়। তার বাড়ি সদর উপজেলার বিনোদপুর কাজিকান্দি গ্রামে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সোবাহান মিয়া।
কুড়িগ্রাম ও উলিপুর : উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই রঘুরায় মাস্টারপাড়ায় টাঙ্গাইল ফেরত এক ব্যক্তি নিজ গৃহে মারা গেছেন। রোববার রাতে জ্বর, সর্দি, কাশি, ও গলাব্যথা নিয়ে তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকাবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় মৃত ব্যক্তিসহ তার স্ত্রী ও মেয়ের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। উলিপুর থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ম অনুযায়ী দাফন করেছে। স্থানীয়রা কেউ এগিয়ে আসেননি।
ঝালকাঠি ও নলছিটি : নলছিটিতে বুকব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মুনীবুর রহমান জুয়েল জানিয়েছেন, ওই কিশোরীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় নলছিটির সবুজবাগ এলাকায় করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
রামগতি (লক্ষ্মীপুর) : রামগতিতে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় উপজেলা চরআফজল গ্রামের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কামনাশিস মজুমদার বলেন, করোনা উপসর্গ থাকায় পরীক্ষার জন্য মৃতদেহ থেকে নমুনা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তার সংস্পর্শে আসা ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। রামগতি থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, মারা যাওয়া ওই যুবকের বাড়িসহ তিন বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
দিনাজপুর : নরসিংদী থেকে দিনাজপুর আসার পথে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। দিনাজপুরের খানসামায় লাশ আসার পর সোমবার উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে দাফন করা হয়েছে। খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রিজওয়ান আহমেদ ফারুফের নেতৃত্বে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির বাড়ি খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের রামনগরে।
পঞ্চগড় : সর্দি-জ্বর-কাশি নিয়ে ১৬ বছরের এক শিক্ষার্থী মারা গেছে। তার বাড়ি ময়দানদীঘি ইউনিয়নের গাইঘাটা গ্রামে। বোদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সোমবার তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে।