মহামারীর মারাত্মক ঝুঁকিতে বাংলাদেশের পুলিশ

0

বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তারা পর্যাপ্ত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছাড়াই জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করতে থাকায় করেনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসার শঙ্কায় রয়েছেন।

স্থানীয় মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০ পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৬০০ জনের বেশি কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।

তাছাড়া পুলিশ রাস্তাঘাট জীবাণুমুক্ত করছে, কর্মজীবী লোকজনকে সহায়তা করছে, লকডাউনে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করছে, আক্রান্ত লোকজনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে, কোয়ারেন্টিন ফাঁকি দেয়া লোকজনকে শনাক্ত করছে।

রাজশাহী জেলার এক এসপি বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আমরা প্রথম সারিতে রয়েছি। কিন্তু আমরা সরকারের কাছ থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) নামে যা পেয়েছি, তা আসলে রেইনকোট আর মুখ ঢাকার সাধারণ মাস্ক।

তিনি বলেন, বাস্তবে করোনাভাইরাসের লক্ষণ নেই, এমন কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে পিপিই দেয়া হচ্ছে না। পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষার জন্য নিজেদেরই মাস্ক, গ্লাভসের মতো সুরক্ষা সামগ্রী কিনে নিতে হচ্ছে। আর যারা করোনা রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করছে, লাশ বহন করছে, তাদেরই কেবল এক সেট করে পিপিই দেয়া হচ্ছে।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, আরো খারাপ ব্যাপার হলো, এসব পিপিই বারবার ব্যবহার করতে হচ্ছে। অথচ এগুলো একবারের বেশি ব্যবহার করলে আর সুরক্ষা থাকে না।

তিনি আরো বলেন, এসব পিপিই মানসম্মত নয়।

শুক্রবার স্থানীয় দৈনিক প্রথম আলোর মতে, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর দুই লাখের বেশি সদস্য রয়েছে। তাদের অনেকে থানায় এক কক্ষে ১০/১২ জন করে থাকতে হয়। এর ফলেও তাদের মধ্যে করোনা সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ২৭ জন ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের।

ঢাকায় কর্মরত আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা কয়েক সপ্তাহ আগে মাস্ক পেয়েছিলাম। পুলিশ যা পেয়েছে, তা নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হয়। অনেকে নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় বাজার থেকে পিপিই কিনে নিয়েছে।

তিনি বলেন, কর্তৃব্য পালন করার নির্দেশ আমরা অমান্য করতে পারি না। 

আবার পুলিশের পক্ষে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাও সম্ভব নয়।

পুলিশের ডিসি মাসুদুর রহমান স্বীকার করেছেন যে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, জনসাধারণের নিরাপত্তা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পুলিশ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।

তিনি বলেন, এটা সত্য যে আমরা আমাদের অফিসারদের ১০০ ভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি। তবে তাদের সহায়তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাদেরকে দায়িত্ব পালনের সময় সব ধরনের নিরাপত্তামূলক সহায়তা প্রদান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পুলিশ, চিকিৎসক ও অন্যদেরকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সহায়তা করছে না।

স্বাস্থ্য পরিষেবা দফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, উৎপাদনকারীদের সরবরাহ করা প্রতিটি মাস্ক তারা পরীক্ষা করতে পারছেন না। তাছাড়া তারা দান হিসেবেও পিপিই পাচ্ছেন।

তবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটরে মতে, পর্যাপ্ত পিপিই ও সুরক্ষা সরঞ্জাম আছে। কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের সুরক্ষা দিতে নিয়মিত তা সরবরাহ করে যাচ্ছে।

সুলতানা বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে অন্যদের চেয়ে বেশি হারে আক্রান্ত হচ্ছে। 

কর্মকর্তারা একমত হন, স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ যদি নাজুক অবস্থায় থাকে, তবে পুরো দেশই করোনাভাইরাসের সামনে নাজুক থাকবে। কারণ মহামারীটির বিরুদ্ধে তারাই প্রথমসারির যোদ্ধা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com