ক্ষুধার জ্বালায় অন্ধ মাকে ভিক্ষা করতে বলছে শিশুরা
গাছ থেকে পড়ে পা ভেঙে পঙ্গু হয়ে গেছেন রুস্তুম আলী খান। স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম জন্ম থেকেই চোখে দেখেন না। পঙ্গু অবস্থায়ই ঘাটে নৌকা বেয়ে সামান্য কিছু আয় করতেন রুস্তম। তবে রুস্তমের নৌকা চালানো সামান্য আয়ে ছয় সদস্যের সংসার চলা কঠিন। তাই সন্তানদের খাবার যোগাতে বাধ্য হয়ে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নেন হোসনেয়ারা। কিন্তু করোনার প্রভাবে নৌকা চালানো বন্ধ। হোসনেয়ারাও ঘরবন্দী। চার সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়েই কাটছে তাদের দিন। ক্ষুধার জ্বালায় মাকে লকডাউন ভেঙৈ ভিক্ষা করতে যেতে বলছে অবুঝ শিশুরা।
স্বামীর সামান্য আয় ও হোসনেয়ারার ভিক্ষায় খেয়ে-পড়ে চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু করোনায় লকডাউনে গৃহবন্দী হয়ে পড়েন তারা দু’জনই। ফলে বেশ কিছু দিন ধরে ঘরে খাবার না থাকায় আহারে অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন।
ঝালকাঠির রাজাপুরের গালুয়া বাজারের ইউনিয়ন পরিষদ-সংলগ্ন এলাকায় এই অসহায় পরিবারটির বসবাস। ক্ষুধার যন্ত্রণায় পঙ্গু স্বামী ও চার শিশু সন্তান অন্ধ হোসনেয়ারাকে ভিক্ষার জন্য বাইরে বের হতে কাকুতি মিনতি শুরু করেছে। কিন্তু বাইরে তেমন লোকজন নেই এবং আইনশৃঙ্খলার ভয়ে বাইরে বের হতে পারছেন না অন্ধ হোসনেয়ারা। এছাড়া তার কোলের শিশুটিকে নিয়ে ক্ষুধার্ত পেটে বেশি সময় হাঁটতেও পারেন না তিনি। রাজাপুর সাংবাদিক ক্লাবের সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই অসহ্য যন্ত্রণাময় জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জন্মান্ধ ভিক্ষুক মা হোসনেয়ারা বেগম।
বর্তমানে তাদের সংসারে চার সন্তান। ফয়সাল (৯), ফাহিম (৬), ফাইজুল (৫) ও পাঁচ মাস বয়সের রোহান। সন্তান ফয়সাল ও ফাহিম বলছে, বাবা তো হাঁটতে পারে না। তুমি ভিক্ষা করতে যাবা না? আমরা কি খাবো? ঘরে তো কিছু নেই। পঙ্গু স্বামী রুস্তুম আলীও নিরুপায়। ছেলেদের আর্তনাদে অন্ধ স্ত্রী হোসনেয়ারাকে ভিক্ষা করার জন্য বিভিন্নভাবে বোঝাচ্ছেন।
হোসনেয়ারা বেগম বলেন, আমি জন্ম থেকেই দুটি চোখে দেখতে পাই না। বিয়ের আগেই গাছ থেকে পড়ে গিয়ে তার স্বামীর একটি পা ভেঙ্গে যায়। সেই থেকে সে ছোট একটি নৌকায় করে ভান্ডারিয়া থেকে গালুয়া বাজারের বিভিন্ন দোকানির মালামাল এনে দেয়ার কাজ করেন। বিয়ের পর সেই রোজকার দিয়ে সংসার চললেও সন্তান হওয়ার পরে সংসারে অভাব দেখা দেয়। স্বামীর ঘরের জমিটুকু ছাড়া অন্য জমি বা অন্য কোনো আয়ের উৎস নাই। তাই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বাধ্য হয়ে আমি ভিক্ষার ঝুলি হাতে নেই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আমরা একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছি।
হোসনেয়ারা বলেন, আমার সংসারে আমি ও আমার স্বামী দু’জনই অচল হলেও আমাদের মধ্যে সুখের অভাব ছিল না। নিজেদের মতো করে এক মুঠ খেয়ে সন্তান নিয়ে ভালোই চলছিলাম। করোনায় স্বামীর ঘাটে নৌকা চলানো বন্ধ। আমিও ঘর বন্দী।
জানা যায়, শনিবার অসহায় পরিবারের খবর পেয়ে রাজাপুর সাংবাদিক ক্লাবের সাংবাদিকরা কিছু চাল-ডালসহ খাদ্য সামগ্রী দেন এবং রোববার সকালে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা আক্তার লাইজু সহয়োগিতা করেছেন।
এ বিষয়ে গালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর মতিউর রহমান জানান, করেনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ বা সরকারি কোনো সহায়তা পায়নি ওই পরিবারটি। আর যে অল্প বরাদ্দ দেয়া হয় তা কাদের দেয়া হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ওই তালিকায় তার নাম পড়ে না। তিনিও সকলকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানান। এ অসহায় পরিবারটিকে সহযোগিতা করতে কল করুন ০১৭৩৫২৩০৫১৯ (হোসনেয়ারা), ০১৭১৮৫৫১৬৮১ (বিকাশ/পার্সোনাল)।