তাদের কান্নার আওয়াজ নদীর ওই পারে পৌঁছায় না
শাহ আলম গাজী। পেশায় জেলে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন প্রায় এক মাস। এর মধ্যে তার ঘরে যায়নি কোনো প্রকার ত্রাণ সামগ্রী। পুঁজি যা ছিল তা দিয়ে এতদিন খেয়েছেন। এখন ঘরে কোনো খাবার নেই। হাত পাতারও জায়গা নেই। কারণ তিনি থাকেন দ্বীপ চরে। তাই গত কয়েক দিন ধরে তিন সন্তান ও স্ত্রীসহ না খেয়ে আছেন।
কোথাও যাওয়ার রাস্তা নেই। দ্বীপ চরের গন্ডি পেরোতে হলে নৌকা কিংবা ট্রলারে যেতে হবে। লকডাউন ভেঙে বের হওয়ার কথা কেউ জানলে বিপদ হতে পারে, তা ভেবে ঘরেই পরিবার নিয়ে অনাহারে দিন পার করতে হচ্ছে তার। শাহ আলম গাজীর বাড়ি পটুয়াখালীর সাগরবেষ্টিত রাঙ্গাবালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরকাশেম। শুধু শাহ আলম গাজী নয়! তার মতো অনাহারে ও অর্ধহারে আছেন ওই দ্বীপের অন্য সবাই। যারা সকলেই নিম্ন আয়ের মানুষ।
চরকাশেম দ্বীপ ছাড়াও রাঙ্গাবালী উপজেলার চরনজির, কলাগাছিয়া ও চর আন্ডায় এখনো পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। তাই সেখানকার মানুষের কষ্টে দিন যাচ্ছে। রাঙ্গাবালী উপজেলার এই চারটি দ্বীপে প্রায় এক হাজার পরিবারের বসবাস। তাদের দাবি, করোনাভাইরাসের লকডাউনের সময়কাল প্রায় এক মাস হলেও দ্বীপগুলোতে পৌঁছেনি কোনো প্রকার ত্রাণ সামগ্রী। সরকারি বা বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে আসেননি তাদের পাশে। তাই দ্বীপের মধ্যে বাসিন্দারা আটকা পড়ে না খেয়ে কাতরাচ্ছেন।
চর কাশেম দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, চরকাশেম দ্বীপে বসবাসকারী লোকজন জেলে ও দিনমজুর পেশায় নিয়োজিত। করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে কর্মহীন তারা। প্রথম দু’এক দিন ভালো কাটলেও কয়েকদিন যেতে না যেতেই অনেকের কষ্টে দিন কাটতে শুরু হয়। ঘরে চাল থাকলে, ডাল নেই! আবার ডাল থাকলে, তেল নেই। এভাবে অভাব লেগে যায়। তবুও আশপাশের সবাই মিলে লেনদেন করে চলছিল কিছু দিন। কিন্তু গত এক সপ্তাহ যাবৎ অবস্থা খুব করুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ লোকের ঘর এখন খাবার শূণ্য। ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে আনেকেই না খেয়ে আছেন। কিন্তু তাদের খোঁজ নেয়ার কেউ নেই। তাদের কান্নার আওয়াজ নদীর ওই পারে গিয়ে পৌঁছে না বলে দাবি চরকাশেমবাসীদের। তাদের প্রশ্ন, শহরের লোকেরা ত্রাণ পেলে চরের লোকেরা কেন ত্রাণ পাবে না? না খেয়ে আর কতদিন কাটাতে হবে। কবে ভাঙবে এই লকডাউন?
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাশফাকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চরকাশেম ও চরনজীরসহ কয়েকটি দ্বীপের বিষয় আমি শুনেছি। এ বিষয়ে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশাকরি রাঙ্গাবালীর কেউ না খেয়ে থাকবে না