জানি না কতদিন ভালো থাকব
ঢাকাই শোবিজের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ইপ্সিতা শবনম শ্রাবন্তী। অসংখ্য নাটক ও বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছেন। শোবিজ জগৎকে বিদায় জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই কন্যাসন্তান রাবিয়াহ ও আরিশাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। করোনাময় এই সময়ে তিনিও সবার মতো রয়েছেন হোম কোয়ারেন্টাইনে। সাম্প্রতিক অবস্থা ও সমসাময়িক কাজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কথা বলেন তিনি। লিখেছেন – পান্থ আফজাল কেমন আছেন? নববর্ষের প্রথমদিন কেমন কাটল?
আলহামদুলিল্লাহ, এখনো ভালো আছি! নববর্ষের দিন ঘরে বসেই কেটেছে। সেদিন একটু জ্বর জ্বর ভাব, গলা ব্যথা ছিল। মনে হচ্ছিল যে, এ যাত্রায় আর বাঁচব না। তবে সব ঠিকঠাক আছি। মেডিসিন খেয়ে ভালো আছি।
এখন যুক্তরাষ্ট্রের কোথায় আছেন?
আমি মেরিল্যান্ডে। আমার বড় বোনের বাসায়। এই সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকাটাই উত্তম। আপনারা সবাই নিশ্চয় ভালো আছেন।
আপনি তো কয়েকদিন আগেও নিউইয়র্কে ছিলেন। সেখানকার অবস্থা কেমন?
জি, নিউইয়র্কেই ছিলাম। এখন মেরিল্যান্ডে এসেছি; আগেও এখানে ছিলাম। কি বলব, খুবই ভয়াবহ অবস্থা নিউইয়র্কের! দিন দিন আরও খারাপ অবস্থার দিকেই যাচ্ছে। নিউইয়র্কে সবাই ঘরের মধ্যে আটকা। টাকা আছে কিন্তু খাদ্য বা বাজার কিনতে পারছে না সেখানকার লোকেরা। অনলাইনে বাজারের অর্ডারও নিচ্ছে না কেউ। তবে এখনো নিউইয়র্কের মতো ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হয়নি মেরিল্যান্ড।
বাসায় সময় কীভাবে কাটছে?
বাসায় বড় বোন ও বাচ্চাদের সঙ্গে সময় দিচ্ছি। মেজ বোন বাংলাদেশে থাকেন। আম্মাও থাকেন। আম্মা অনেক অসুস্থ! তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলি। ভাই-বোনের সঙ্গে কথা বলি, নিয়মিত খোঁজ-খবর নিই। আগে তো তেমন করে সবার খোঁজ নিতে পারতাম না। কাজে থাকলে যোগাযোগটা কম হয়। এখন নিচ্ছি। মেয়েরা বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলে। এখানে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ নিই ফোনে ফোনে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে নিয়মিত বাংলাদেশের খবর নিচ্ছি। এছাড়াও রান্না করছি, মেয়েদের ফ্রেস খাবার খাওয়াচ্ছি। নামাজ পড়ছি। এভাবেই তো দিন চলে যাচ্ছে।
মেরিল্যান্ডে কতদিন থাকবেন?
দুই-তিন সপ্তাহ। এখন তো বাচ্চাদের স্কুল-কলেজ বন্ধ। এরপর নিউইয়র্কে চলে যাব নিজের বাসায়।
দেশে আসতে ইচ্ছা করে না?
ইচ্ছা তো করছে, খুবই। বিশেষ করে মাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। মা অনেক অসুস্থ। কিন্তু এখন উপায়ও নেই বাংলাদেশে যাওয়ার। সব বন্ধ। জানি না কতদিন ভালো থাকব। সবকিছুই উপরওয়ালা জানেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সিঙ্গেল মম ও মেয়েদের জন্য সুযোগ-সুবিধা কেমন?
অনেক সুযোগ-সুবিধা! আল্লাহর রহমতে সবরকম সুবিধা পাচ্ছি। আর এখানে মেয়েদের প্রায়োরিটি বেশি দেওয়া হয়। যে কোনো সমস্যায় পড়লে সর্বাত্মক সাপোর্ট করে।
নিয়মিত বাংলাদেশের খবর নিচ্ছেন তো?
সময়-সুযোগ পেলেই বাংলাদেশের খবর নিচ্ছি। কিছু খবর শুনে ও দেখে খুবই বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছি। যখন দেখি ত্রাণের চাল চুরি করছে স্থানীয় প্রতিনিধিরা, তখন খুবই খারাপ লাগে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসব জনপ্রতিনিধি এরকম কাজ শুরু করেছেন, এটা দেশের জন্য খুবই বিপজ্জনক! আবার সরকার লকডাউনসহ ঘরে থাকার যেসব নিয়ম করেছে, সেগুলো জনগণ ঠিকমতো পালন করছেন না। ঘরে থাকতে বললেও মানুষ ঘরে থাকছেন না। রাস্তায় লাশ পড়ে থাকলেও কেউ দেখার নেই। অনেকে ত্রাণ দিয়ে ছবি তোলে। সেগুলো ফেসবুকে আপলোড দেয়। এসব দেখতে আর ভালো লাগে না। আর পজেটিভ কোনো নিউজও দেখছি না এই সময়। এদেশে যে কোনো নিয়ম কড়াকড়িভাবে পালন করে, কিন্তু বাংলাদেশে কেউই নিয়মের মধ্যে নেই।
কিছুদিন আগে এদেশ থেকে আপনার একজন সহকর্মী লাইটম্যান আপনার খোঁজ নিয়েছিলেন। আপনি ফেসবুকে পোস্ট করে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন…
যখন কাজ করতাম, তখন আমাদের লাইটম্যানরা কি যে কষ্ট করতেন, যা বলার ভাষা নেই! কীভাবে আমাদের স্ক্রিনে সুন্দর দেখাবে, তা নিয়েই তারা বেশি ব্যস্ত থাকতেন। আমি ভীষণভাবে ঋণী আমার প্রোডাকশনের সব মানুষের কাছে। মার্চের ২৮ তারিখে আমার খুব প্রিয় একজন লাইটম্যান ইব্রাহিম ফোন দিয়ে আমার খোঁজ-খবর নেন। ভালো আছি কিনা জানতে চান। ভালো লাগে যে, এখনো এই মানুষেরা আমাকে মনে রেখে ফোন দেন, ভালোবাসেন। আমি তাদের কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
শোবিজের সবার সঙ্গে আপনার যোগাযোগ আছে?
সিনিয়র যারা আমরা সবাই সবার খোঁজ নিচ্ছি নিয়মিত। এখানে রিচি, মিলা, আফরোজা আপাসহ সবার সঙ্গে ফোনে-ফেসবুকে যোগাযোগ হচ্ছে। এছাড়াও তানিয়া ও সুইটি আপাসহ শোভন ভাই, ওমর সানী ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়। একে অন্যের খোঁজ নিচ্ছি।
বিদেশ-বিভূঁইয়ে দেশের নাটক দেখা হয়?
না, নাটক দেখা হয় না। এমনিতেই এখনকার নাটক দেখতে ভালো লাগে না। নাটকে কোনো গল্প নেই। সংলাপ মানেই শুধু ঝগড়া আর আঁতলামি। সেই ‘৫১বর্তী’ আমাদের ঝগড়া শিখিয়ে দিয়েছে, সেটা আর বন্ধ হয়নি। এখন নোয়াখালী, বরিশালসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় ঝগড়াসমৃদ্ধ নাটক সত্যিই বিরক্তিকর! আগেকার নাটকে সুন্দর একটি গল্প থাকত, চরিত্র থাকত। এখন কেন সেসব নেই?