করোনায় ৭০ শতাংশ দরিদ্র মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কতটা বিপদে পড়েছে পিপিআরসি ও বিআইজিডি এই দুটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা জরিপে তা উঠে এসেছে। করোনার প্রভাবে দেশে ৭০ শতাংশ দরিদ্র মানুষের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এই দরিদ্র্য শ্রেণির মধ্যে রয়েছে অতি দরিদ্র, মাঝারি দরিদ্র এবং দারিদ্র্যসীমার ওপরে ছিল কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে তারাও দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে এসেছে।
জরিপে দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ দরিদ্র শ্রেণির ভোগ কমে গেছে। আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে শহরের ৭১ শতাংশ দরিদ্র মানুষের। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গর্ভনেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জরিপে আরো দেখা গেছে, শহরে বস্তির বসবাসরত ৮২ শতাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আর গ্রামাঞ্চলে কর্মহীন হয়েছে ৭৯ শতাংশ দরিদ্র মানুষ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফল তুলে ধরেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন। হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে কর্মহীন ও আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া দরিদ্র মানুষদের জন্য নগদ টাকা দেয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে আমাদের জরিপে উঠে এসেছে প্রতি মাসে দরিদ্র্য মানুষদের জন্য খরচ হবে পাঁচ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। দেশে এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা তিন কোটি ৮১ লাখ ৫৬ হাজার ৬৬৯ জন। যার মধ্যে গ্রামে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দুই কোটি ৬৯ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩০ জন আর শহরে দরিদ্র মানুষ আছে এক কোটি ১১ লাখ ৯২ হাজার ১৩৯ জন।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, টেলিফোনের মাধ্যমে গত চার এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত জরিপটি করা হয়েছে। দৈব চয়নের ভিত্তিতে ৫ হাজার ৪৭১ জন দরিদ্র মানুষকে টেলিফোনের মাধ্যমে জরিপটি করা হয়েছে। যার মধ্যে শহর থেকে নেয়া হয়েছে ৫১ শতাংশ মানুষের আর গ্রাম থেকে ৪৯ শতাংশ দরিদ্র মানুষের সঙ্গে কথা বলে জরিপটি করা হয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ দিনমজুর বলেছে, এখন তাদের কোনো কাজ নেই। ৬০ শতাংশ শ্রমিক বলেছে করোনার প্রভাবে এখন তাদের কোনো কাজ নেই। ৫৯ শতাংশ রান্না ও রেস্টুরেন্ট শ্রমিক বলেছে, তাদের কাজ বন্ধ। ৫৭ শতাংশ গৃহপরিচারিকা বলেছে, তাদের কাজ নেই। ৫৫ শতাংশ পরিবহন শ্রমিকের কাজ বন্ধ। ৫৪ শতাংশ কৃষি শ্রমিকের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
জরিপে আরো দেখা গেছে, রেস্টুরেন্টের একজন শ্রমিক আগে যে টাকা আয় করতেন, করোনা প্রভাবে সেটি ৯৩ শতাংশ কমে গেছে। রিকসা চালক আগে যে টাকা আয় করতেন, করোনা প্রভাবে তার ৭৩ শতাংশ আয় কমে গেছে। করোনা মোকাবিলার জন্য কি জরুরি এমন প্রশ্নে সবাই বলেছে, নগদ টাকা ও খাদ্য সহযোগিতা দুটোই জরুরি। বিভিন্ন মহল থেকে সহযোগিতা পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত এনজিওদের ভূমিকা অত্যন্ত নিষ্ক্রিয় বলে জরিপে উঠে এসেছে।