‘কয়েক দিন ধইরা বাসায় খাবার নাই, অভাবে নারায়ণগঞ্জ ছাড়তাছি’
‘কয়েক দিন ধইরা বাসায় খাবার নাই। ঘর ভাড়া দিতে পারতাছি না। কোনো কাজকর্ম নাই। ঠিকমতো খাইতে পারতাছি না। পেট তো চালাইতে হইবো।
মাইয়াডার চেহারাটা একটু দেখেন স্যার। সন্তানসম্ভবা কিন্তু খাওয়াতে পারতাছি না। আমরা কি সাধে যাইতাছি। এখানে থাকলে আমরা না খাইয়া মইরা যামু। স্যার আপনি কি আমাদের না খাইয়া মরতে কন?’
করোনায় হটস্পট নারায়ণগঞ্জ থেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে যাওয়ার সময় বুধবার রাতে ফতুল্লার রেলস্টেশনে পুলিশের কাছে এক নারী এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া জানান।
ওই নারীসহ অন্য যাত্রীরা জানান, তারা ফতুল্লার আলীগঞ্জ ও রেলস্টেশন এলাকাতে বসবাস করেন। দিনমজুর, লোড-আনলোড শ্রমিক ও রিকশা চালিয়ে ওই এলাকায় জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন।
সবার কণ্ঠে একটিই কথা ছিল– ক্ষুধা তো আর লকডাউন বুঝে না, অভাবের তাড়নায় ছাড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ।
মঙ্গলবার রাতে ৫ শতাধিক মানুষকে আটকের পরের দিন বুধরার রাতেও পুলিশ পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৬০ নারী-পুরুষকে আটক করে তাদের বুঝিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় ফতুল্লা রেলস্টেশন এলাকায় দুটি ট্রাক থেকে ৯০ নারী-পুরুষ ও শিশুকে আটক করা হয়েছে। তারা কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানা এলাকার বাসিন্দা। তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে বাসায় ফেরত পাঠিয়েছি।
রাত পৌনে ১২টায় পাগলার রসুলপুর এলাকায় ট্রাক থেকে ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে। তারাও কিশোরগঞ্জ জেলার বাসিন্দা।
এ ছাড়া ফতুল্লার তক্কারমাঠ এলাকা থেকে ট্রাকযোগে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে আরও ৩০ জনকে আটক করা হয়।
ওসি আরও জানান, ইতোমধ্যে করোনার কারণে নারায়ণগঞ্জকে লকডাউন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ইনপুট-আউটপুট বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি জেনেও যেসব চালক যাত্রী উঠিয়েছেন, তাদের ট্রাক আটক করেছি।তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি সবাইকে সরকারি নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকার অনুরোধ করেন।