আমিই একমাত্র চিকিৎসক, আক্রান্ত হলে সবাই শেষ
এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহার করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া এবং করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়া রোগীর নমুনা সংগ্রহের নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু এই মাস্ক না থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক কামরুল আজাদ।
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত এবং এর উপসর্গ দেখা দেয়া রোগীদের চিকিৎসা ও নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে বরগুনায় একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক কামরুল আজাদ। তার এই পোস্টের মাধ্যমে বরগুনার চিকিৎসকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে চিকিৎসক কামরুল আজাদ নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাকে এন-৯৫ মাস্ক দিন অথবা মৃত্যুর মাধ্যমে পালাতে দিন। লোক দেখানো বাজারের ব্যাগের কাপড় দিয়ে তৈরি গাউন দেয়া বন্ধ করুন।’
এ বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট চিকিৎসক কামরুল আজাদ বলেন, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে এই মুহূর্তে তিনজন করোনা পজিটিভ রোগী চিকিৎসাধীন। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত সন্দেহে চিকিৎসাধীন আছেন আরও ২৩ জন। এসব রোগীর চিকিৎসা থেকে শুরু করে নমুনা সংগ্রহ পর্যন্ত তাদের সংস্পর্শে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কেননা এন-৯৫ মাস্কই পারে কেবল শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করতে। কিন্তু আমাদের এন-৯৫ মাস্ক নেই। এজন্য আমিসহ আমার পুরো টিম ঝুঁকিতে পড়েছি। এই ঝুঁকি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবুও আমরা এন-৯৫ মাস্ক পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, আইসোলেশনে যারা দায়িত্ব পালন করেন, তারা সাতদিন দায়িত্ব পালন শেষে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকেন। অথচ বরগুনায় চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে আমার কোয়ারেন্টাইনে থাকার সুযোগ নেই। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয় আমার। তাই আমি যদি সংক্রমিত হই তাহলে আমার কাছে আসা সাধারণ রোগীরা সংক্রমিত হবেন। এর মাধ্যমে পুরো জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। তাতে সবাই শেষ হয়ে যাবে। তাই বরগুনায় দ্রুত এন-৯৫ মাস্কের সরবরাহ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাই।
এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন হুমায়ুন শাহীন খান বলেন, আমাদের এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা হয়নি। এ কারণে চিকিৎসকরা চরম ঝুঁকি নিয়ে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে যাচ্ছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর আমাদের বহু পুরোনো কিছু এন-৯৫ মাস্ক দিয়েছিল। যা এখন আর ব্যবহার উপযোগী নয়। তাই আমাদের চিকিৎসকরা নিরুপায় হয়ে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ এই মাস্ক ব্যবহার করে করোনা সংক্রমিত রোগীদের সংস্পর্শে যাওয়া মোটেই নিরাপদ নয়।
জানতে চাইলে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, বরগুনার স্বাস্থ্য বিভাগ এন-৯৫ মাস্কের সংকটের কথা আমাকে কখনও জানায়নি। যদি জানাতো তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি চিকিৎসকদের চাহিদা অনুযায়ী এন-৯৫ মাস্কের ব্যবস্থা করতাম।