‘হাত ধুইয়্যা কি করমু, পেটে ক্ষুধার জ্বালায় মরতাছি’

0

‘বারবার হাত ধুইয়্যা কি করমু, পেটে তো খাওন নাই। পেটে ক্ষুধার জ্বালা। ছোট ছোট বাচ্চা লইয়্যা না খাইয়া মরতাছি। সবাই বলে সাহায্য করতেছে কিন্তু আমরা তো কোনো সাহায্য পাই না। শুধু পাঁচটা সাবান পাইছি। হাত ধুইতাছি কিন্তু ঘরে তো খাওন নাই। বাঁচতে হইলে এবার তো রাস্তায় নামতে হইবো।’

গতকাল সোমবার দুপুরে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ডের উত্তর র‌্যালীবাগান এলাকার বাসিন্দা ফুলহর খাতুন।

তার সাথে একইভাবে আক্ষেপ করে সুফিয়া খাতুন জানান, ‘হাত ধুয়ে কি করমু। কেমনে বাঁচমু। করোনার আগে তো পেটের জ্বালায় মইরা যাইতেছি। আমার আবেদন উত্তর র‌্যালীবাগানে যেন সাহায্য দেয়া হয়। কেউ সাহায্য করে না আমাগো। আমরা এ পর্যন্ত আধাকেজি আটাও পাই নাই।’

তাদের অভিযোগ এখন পর্যন্ত তাদের এলাকায় কোনো খাবার পৌঁছায়নি।

যদিও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

র‌্যালীবাগান এলাকার আরেক বাসিন্দা বলছিলেন, ‘আমরা বস্তি মধ্যে থাকি। আমাদের কেউ কোনো সাহায্য করতেছে না। আমাদের বাধ্য হয়ে কাজ-কামের জন্য রাস্তায় নামতে অইবো। আমাদের পোলাপান আছে, সংসার আছে, আমরা কেউ কোনো খাদ্য পাইতাছি না।’

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে ত্রাণ বিতরণে সুষ্ঠু তদারকি হচ্ছে না। সিটি করপোরেশন তাদের দুটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, কাউন্সিলররা তাদের পরিচিতজনদের ত্রাণ দিচ্ছেন। এমনকি ত্রাণের তালিকায় তারা নিজের লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ফলে প্রকৃত অসহায় মানুষ ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

একইভাবে জেলা প্রশাসনের ত্রাণ স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে বিতরণ শুরু হয়। কিন্ত বিতরণকালে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠে। জেলা প্রশাসন ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার জন্য কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীকে দায়িত্ব দিয়েছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। এমনকি ভুক্তভোগীরা বিক্ষোভ করার ঘটনাও ঘটেছে।

এদিকে, ত্রাণ না পেয়ে জেলা প্রশাসনের হটলাইনে প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ আসছে। সবাইকে শুধু আশ্বাস দিয়ে শান্ত রাখা হচ্ছে।

ত্রাণ না পেয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২১নং ওয়ার্ড বন্দর এলাকার কাউন্সিলর হান্নান সরকারের অফিস ঘেরাওসহ বিক্ষোভ মিছিল করেছে নি¤œ আয়ের মানুষ। জাতীয় পরিচয়পত্র নিলেও এখনো কোনো খাদ্যসামগ্রী পাননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় কর্মহীন ও অস্বচ্ছল ওয়ার্ডবাসী। ১১ এপ্রিল দুপুর ১২টায় নাসিক ২১নং ওয়ার্ডস্থ শাহী মসজিদ এলাকায় অসহায় ও কর্মহীন প্রায় তিন শ’ পরিবার খাদ্যসামগ্রীর কোনো সহায়তা না পেয়ে কাউন্সিলর কার্যালয় ঘেরাও ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

খবর পেয়ে বন্দর ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষুদ্ধদের শান্ত করে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ জানান এবং বিষয়টি নিয়ে কাউন্সিলরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আমাদের কাজ-কর্ম একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা ঘর থেকে বেরোতে পারি না। সরকারের দেয়া লকডাউনে আমরা কঠিন বিপদে আছি। আমরা পেটের দায়ে বাইরে বের হলে পুলিশ পিটায়। কাজ না করলে খামু কি।’

বিধবা নারগিছ বলেন, ‘আইডি কার্ড দিছি ১০ দিন আগে। কাউন্সিলর হান্নান সরকারের অফিসে গেলে তাড়িয়ে দেয়। বলে খাবার বাড়িতে যাবে। কিন্তু পরে আর যায় না।’

গত বুধবার সদর উপজেলার কুতুবপুর ও কাশিপুর ইউনিয়ন ও খাদ্যের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ফতুল্লা ইউনিয়নের ২ ও ৩ নংওয়ার্ডবাসী। খাদ্যসামগ্রী না পেয়ে ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ করে রাস্তায় নেমে আসে নি¤œ আয়ের শত-শত নারী-পুরুষ। পরে তারা ফতুল্লা ইউপি চেয়াম্যানের বাসভবন ঘেরাও করেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com