সাংবাদিক থেকে বলিউড নায়িকা, জেনে নিন জ্যাকুলিনের অজানা গল্প
বলিউড চিত্রনায়িকা জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজকে সবাই চেনেন। সম্প্রতি ‘বড় লোকের বিটি লো’ গানে নেচে আবারও আলোচনায় এসেছেন তিনি। চলুন জেনে নেওয়া যাক জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ সম্পর্কে।
টানা চার বছর সক্রিয় সাংবাদিকতা করেছেন। খবর পড়তেন টিভিতে। সেখান থেকে বিনোদন দুনিয়ায় আগমন। লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের মহলেও বাজিমাত করেছেন সিংহল সুন্দরী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ।
যার ‘লম্বা লম্বা চুল’-এ লাল গেন্দা ফুল দেখে অভিভূত অনুরাগীরা, সেই জ্যাকলিন বড় হয়েছেন মিশ্র সংস্কৃতিতে। তার জন্ম ১৯৮৫ সালের ১১ আগস্ট, বাহরাইনের মানামা-য়। তার বাবা এলরয় ফার্নান্দেজ ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত শ্রীলঙ্কান। পেশায় মিউজিশিয়ান এলরয় আশির দশকে অশান্ত শ্রীলঙ্কা ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন বাহরাইন।
বাহরাইনে এলরয়ের সঙ্গে আলাপ হয় মালয়েশিয়ান বিমানসেবিকা কিমের। বিয়ে করেন তারা। তাদের দুই ছেলে এবং দুই মেয়ের মধ্যে সব থেকে ছোট জ্যাকলিন। ১৪ বছর বয়স থেকে বাহরাইনের টেলিভিশনে তিনি সঞ্চালনার কাজ শুরু করেন।
বাহরাইনে পড়াশোনার পরে জ্যাকুলিন পাড়ি দেন সিডনি। সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেন মিডিয়া স্টাডিজে। এর পর শ্রীলঙ্কায় ফিরে বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। রাতে টিভি চ্যানেলে খবরও পড়তেন।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক জ্যাকুলিনের আশৈশব। শ্রীলঙ্কায় ফিরে তার মা একটা সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন বিভাগে কাজ শুরু করেন। ছোটবেলা থেকে ডেডলাইনস, বাইলাইনস, রিলিজ অর্ডার— এই শব্দগুলো শুনতে অভ্যস্ত ছিলেন জ্যাকলিন। শুনতে শুনতেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন জার্নালিজমের।
তবে জ্যাকুলিনের সাংবাদিক হওয়ার পেছনে আরও একজনের ভূমিকা ছিল। তিনি তার চাচি ফ্রেডরিকা জান্সজ। একটি নামী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ফ্রেডরিকা। এলটিটিই, প্রভাকরণ, শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ— এই সব বড় ইভেন্ট কভার করেছিলেন তিনি। শ্রীলঙ্কান জার্নালিস্ট অব দ্য ইয়ার-ও হয়েছিলেন তিনি। জ্যাকলিনের ওপর তার গভীর প্রভাব ছিল।
তাকে দেখেই জ্যাকুলিনের মিডিয়া স্টাডিজ-পাঠ। তার পর সিডনি থেকে ফিরে যান কলম্বো। যোগ দেন ‘ইয়ং এশিয়ান টেলিভিশন’-এ। রাত ১১টার বিজনেস-বুলেটিনও পড়তেন তিনি।
ব্যস্ত সাংবাদিকের পাশাপাশি আরও একটা সত্তা ছিল জ্যাকুলিনের। ছোট থেকেই তিনি হলিউড তারকাদের ভক্ত ছিলেন। প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন অভিনয়ের। সাংবাদিকতার পাশাপাশি টুকটাক মডেলিং-ও করতেন। এরপরই একটা লম্বা লাফ। ২০০৬ সালে তিনি মিস শ্রীলঙ্কা প্রতিযোগিতায় জয়ী হন। সে বছর লস অ্যাঞ্জেলসে মিস ইউনিভার্স-এর মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
সাংবাদিকতা-মডেলিং-এর দু’নৌকোয় বেশি দিন পা দিয়ে থাকলেন না জ্যাকুলিন। এক সাক্ষাৎকারে পরে বলেন, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সাংবাদিকতায় আর যা-ই হোক, ব্যাংক ব্যালান্স বাড়বে না। শেষ অবধি ঠিক করেন, এ বার থেকে অভিনয় আর মডেলিং-ই করবেন।
২০০৯ সালে ভারতে আসেন মডেলিং-এর কাজে। সে বছরই সুজয় ঘোষের কাছ থেকে ‘আলাদিন’ ছবিতে কাজের সুযোগ। রীতেশ দেশমুখের বিপরীতে জ্যাকুলিন ছিলেন প্রিন্সেস জেসমিনের ভূমিকায়। ছবি বক্স অফিসে ব্যর্থ হলেও ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত পান নবাগতা জ্যাকুলিন।
এর পর ‘মার্ডার টু’, ‘হাউসফুল টু’, ‘রেস টু’, ‘কিক’, ‘রয়’, ‘ব্রাদার্স’, ক্রমশ লম্বা হতে থাকে জ্যাকুলিনের ফিল্মোগ্রাফি। বলিউডে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন দারুচিনির দ্বীপের এই সুন্দরী।
২০০৮ সাল নাগাদ জ্যাকলিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বাহরাইনের যুবরাজ হাসান বিন রসিদ আল খলিফার সঙ্গে। তিন বছর পরে ভেঙে যায় তাদের প্রেম।
২০১১ সালে ‘হাউসফুল টু’ ছবির শুটিংয়ে জ্যাকুলিনের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক হয় পরিচালক সাজিদ খানের সঙ্গে। এমনও শোনা গিয়েছিল, তাঁরা বিয়ে করতে চলেছেন। কিন্তু দু’বছর পরে ভেঙে যায় জ্যাকুলিনের এই সম্পর্কও।
বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে জ্যাকুলিন সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন। ২০১৪ সালে তাকে ‘উওম্যান অব দ্য ইয়ার’ তকমা দেয় পেটা (ইন্ডিয়া)।
কলম্বোতে জ্যাকুলিনের একটি রেস্তোরাঁ আছে। তার নাম ‘কামসূত্র’। সিংহলিজ ভাষায় ‘কাম’ মানে খাবার। সেখান থেকেই নামকরণ। অভিনয়-মডেলিং-এর ক্যারিয়ারের পাশাপাশি দশভুজার মতো নিজের রেস্তোরাঁ-ব্যবসাও পরিচালনা করেন এই সিংহলি-সুন্দরী।