ভারতের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের দাবি বিএনপির: জনদৃষ্টি আড়াল করতেই সম্রাটকে গ্রেফতার নাটক
ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিকে ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। রোববার সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এমন দাবি করে বলেন, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার, ফেনীর নদীর পানি ত্রিপুরায় সরিয়ে নেয়া এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে গ্যাস পাঠানোর চুক্তি সুস্পষ্টভাবে সংবিধানপরিপন্থী।
এসব চুক্তি সংবিধানের ১৪৫ক অনুচ্ছেদের গুরুতর লঙ্ঘন। যা সংবিধানের ৭ক অনুচ্ছেদের অধীনে সংবিধান লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধের শামিল। এসব চুক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তা অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান তিনি।
ভারতের সঙ্গে চুক্তি থেকে জনদৃষ্টি আড়াল করতে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেফতারের নাটক- এমন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছেন একটা চমক দেখানো হবে। আসলে এগুলো (খালেদ, শামীম, সম্রাট) হচ্ছে প্রত্যেকটি নানা ধরনের নাটক, প্রহসন। প্রতিনিয়ত এগুলো চলছে। অর্থাৎ এই যে অসম চুক্তি করছেন সেজন্য সম্রাটকে এতদিন আড়ালে রাখা হয়েছিল। এটা (গ্রেফতারের ঘোষণা) দেখানো মানে, মানুষ যেন এই চুক্তির বিষয়ে কথা না বলে বা এ থেকে দৃষ্টি যেন অন্যদিকে চলে যায়। অনেকদিন থেকে তো আমরা শুনছি- র্যাবের ডিজি বলছেন, আপনারা ধৈর্য ধরুন, এসব কথাবার্তা শুনছি। বাংলাদেশের মানুষকে আওয়ামী লীগ বরাবরই বেকুব মনে করে। কিন্তু জনগণ তাদের কি মনে করে এটা বোঝার বোধশক্তি তাদের নেই, আর নেই বলেই এ ধরনের নাটকগুলো করে। এসব করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবে না।
নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, কাজী রফিক, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে রিজভী বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থপরিপন্থী এসব চুক্তি করে প্রধানমন্ত্রী তার সাংবিধানিক শপথ ভঙ্গ করেছেন। তিনি তার স্বার্থরক্ষায় তার কৃত শপথভঙ্গের প্রমাণ দিয়েছেন। নিজ দেশের স্বার্থের চেয়ে বিদেশি রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করেছেন। তিনি (শেখ হাসিনা) প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার সাংবিধানিক সব অধিকার হারিয়েছেন। তাই এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা ও তার সরকারেরও পদত্যাগ দাবি করছি। এসব চুক্তি বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বাতিল করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করা হবে না। শনিবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকে ৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ভারতে ত্রিপুরার একটি শহরে সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারেও চুক্তি হয়েছে।
রিজভী বলেন, এই চুক্তিগুলোর খবর জেনে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। মনে হয়েছে, এগুলো চুক্তি নয়, শেখ হাসিনা আরেকটি দাসখত দিলেন। এর মাধ্যমে মূলত স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের সমুদ্রবন্দর, ফেনী নদীর পানি ও জ্বালানি সংকটময় বাংলাদেশের গ্যাস অন্যের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নিজেদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে উপকূলীয় নজরদারির জন্য বাংলাদেশের রাডার স্থাপনের অনুমতিও দেয়া হয়েছে। তার বদলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন ক্ষমতার মসনদে থাকার গ্যারান্টি আর ঠাকুর শান্তি পুরস্কারের একটি পদক। বাংলাদেশের মানুষের বদনসিব, বিনিময়ে বাংলাদেশের কিছুই পায়নি। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকলে কখনই বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হবে না।
রংপুর-৩ উপনির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে রিজভী বলেন, শনিবার রংপুর-৩ আসনে একটি প্রহসনের নির্বাচন হয়ে গেছে। সেখানে প্রত্যেকটিতে ইভিএম দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলে এটা প্রমাণিত হল সেখানে ইভিএম ব্যর্থ। নির্বাচনের দিন ৩ থেকে ৪ শতাংশ লোকও উপস্থিত ছিল না অথচ দেখানো হয়েছে ২১ শতাংশ। একদিকে প্রহসনের নির্বাচন হয়, অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাছ ধরছেন, বারবিকিউ করছেন। মানে নির্বাচন কোনো সিরিয়াস বিষয় নয়। ওনারা তো মধ্যরাতের নির্বাচন আগেই করেছেন।