এক ঝলক
প্রতিবছর মার্কিন ম্যাগাজিন ফোর্বসের এশিয়ার ৩০ বছরের কম বয়সী উদ্যোক্তা ও সমাজ পরিবর্তনকারী (চেঞ্জমেকার) তালিকা তৈরি করে। ফোর্বস ম্যাগাজিন গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ তালিকাটি প্রকাশ করে। এবার এ তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাবা খান ও ইশরাত করিমের নাম। রাবা খান সমাজের নানা বিষয়ে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও অনলাইনে প্রকাশ করে সুপরিচিত হয়েছেন। তার উদ্যোগের নাম ‘দ্য ঝাকানাকা প্রজেক্ট’। আর ইশরাত করিম আমাল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের সহায়তায় নানা কাজ করেন।
এ ফাউন্ডেশন বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতন, বিধবা নারীসহ পিছিয়ে পড়াদের উন্নয়নে কাজ করে। ইশরাত এবং রাবাকে নিয়ে লিখেছেন- সাইফ ইমন
রাবা মনে করেন মিডিয়া মানেই খারাপ এই ধারণার পরিবর্তন দরকার
গান, অভিনয়, উপস্থাপনা ও ইউটিউবের জন্য ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়েছেন রাবা খান। ২০১৯ সালের অমর একুশে বইমেলায় ‘বান্ধবী’ নামে একটি বই লিখে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। রাবা খান ব্যাপকভাবে আলোচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও। ফোর্বসের ‘৩০ আন্ডার ৩০ এশিয়া ২০১৮’ নামের এই তালিকায় নাম রয়েছে রাবা খানের। যে ১০টি শ্রেণিতে ফোর্বস নাম তুলে ধরেছে তার মধ্যে রয়েছে শিল্পকলা, বিনোদন, আর্থিক খাত, বিপণন ও বিজ্ঞাপন, খুচরা বিক্রি এবং ই-কমার্স, প্রযুক্তি, উৎপাদন, স্বাস্থ্য ইত্যাদি। রাবা খান মনোনয়ন পেয়েছেন গণমাধ্যম, বিপণন ও বিজ্ঞাপন শ্রেণি থেকে। এ শ্রেণিতে ২০ বছরের তরুণী রাবা খানকে ‘ফিচারড অনারি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ফোর্বসের ওয়েবসাইটে রাবা খানের একটি ছবির পাশে তার একটি মন্তব্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে রাবা বলেন, ‘ক্যামেরার সামনে থাকা আমাকে আনন্দিত করে। আমার মন্তব্যগুলো মানুষকে আনন্দ দেয়, এটা বাড়তি পাওনা।’ ফোর্বসের তালিকায় রাবা খানকে ‘এন্টারটেইনার’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। তার উদ্যোগের নাম ‘দ্য ঝাকানাকা প্রজেক্ট’। রাবা খান বলেন, ‘ছয় বছর আগে ভিডিও বানানো শুরু করেছিলাম। ‘দ্য ঝাকানাকা প্রজেক্ট’ চ্যানেল থেকে নিয়মিত ভিডিও বানাচ্ছি। এ প্রজেক্টটিই ওদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে। ভিডিও নিয়ে আমার পরিকল্পনার কথাও ওদের বলেছিলাম। বলেছিলাম, আমাদের এই জেনারেশন আগে আগেই কাজের পরিকল্পনা করে রাখে। আমরা ‘প্ল্যান এ’, ‘প্ল্যান বি’ সব কিছুই চিন্তা করেই আগাই। বিষয়টি ওদের কাছে ভালো লেগেছে। সঙ্গে আমার অনেক বিজনেসও আছে। সে বিষয়গুলোও হয়তো ওরা ভাবনায় রেখেছিল।’ রাবা খান আরও বলেন, ‘এই স্বীকৃতির জন্য আমি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ যারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছেন এবং আমি কৃতজ্ঞ আমার বাবা-মা’র প্রতি।’ তবে চলার পথ মসৃণ ছিল না রাবা খানের। তিনি বলেন, ‘এই পথে অনেক বাধা ছিল। যেহেতু মিডিয়া বলতেই একটুখানি খারাপ চোখে দেখেন অনেকে। আমাদের সোসাইটির মধ্যে এখনো ধারণাটি আছে। আমি এটিকে নতুন নাম দিতে চাচ্ছিলাম। নতুন নামটা এরকম হয়েছে যে, মিডিয়ার মেয়েরা খারাপ না। মিডিয়া মানেই সব সময় খারাপ হবেÑ এই ধারণার পরিবর্তন দরকার। যারা আমার কাজ নিয়ে সমালোচনা করছে তাদের ব্যাপারে চিন্তাই করছি না। কারণ যারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন আমার জীবনে তাদের ভূমিকা অনেক বেশি। যারা আমার সমালোচনা করেছে তারা যেটা ভাবার সেটা ভাববেই কিন্তু আমার কাজে আমাদের তরুণ প্রজন্ম কোনো না কোনোভাবে অনুপ্রাণিত হয়।’ ভিডিও কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে রাবা খানই দেশের প্রথম ফিমেল কমেডিয়ান। ফলে অন্য কারও ক্যারিয়ার ট্র্যাক ফলো করার কোনো সুযোগ তার ছিল না। ফলো করার মতো সামনে কেউ ছিল না। রাবা খান নিয়মিত টিভি শো করছেন, পরে রেডিও শো শুরু করেন।
ইশরাত স্বপ্ন দেখেন এমন বাংলাদেশের যেখানে সব মানুষের সুযোগ সমান থাকবে
ফোর্বসের ‘৩০ আন্ডার ৩০ এশিয়া ২০১৮’ নামের তালিকায় ১০ শ্রেণিতে ৩০ জন করে ৩০০ তরুণের নাম রয়েছে। বাংলাদেশের ইশরাত করিম নির্বাচিত হয়েছেন সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে। তালিকায় স্থান পাওয়া সবাইকে মিলেনিয়ালস বলা হয়। ইশরাত করিম এইচএসসি পাস করে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফ্রিন্যান্সের ছাত্রী ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে বৃত্তি নিয়ে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে ‘সোশ্যাল বিজনেস’ বা ‘সামাজিক ব্যবসা’ নিয়ে মাস্টার্স করেছেন। বিদেশে না থেকে দেশে ফিরে গরিব অসহায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। আমি আমার শিক্ষা আমার দেশে কাজে লাগাতে চাই। নিজের একটা কিছু করার মজাই আলাদা। দ্যাটন হোয়াই আই টুক দ্য চ্যালেঞ্জ।’ নিজের স্বপ্নকে পূরণ করতে ইশরাত গড়ে তুলেছেন ‘আমাল ফাউন্ডেশন’। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জরুরি সংকট, নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষিতকরণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং বঞ্চিত সম্প্রদায়ের আশ্রয়ণ দেওয়ার কাজগুলো করে যাচ্ছে আমাল ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে শত শত সদস্য এবং দাতাগোষ্ঠীর কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। প্রতিকূল পরিবেশে বসবাসরত দরিদ্র মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবার কাজটিও করে যাচ্ছে। সংগঠনটির চার’শ-এর অধিক স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ বিতরণ, শীতবস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, রোহিঙ্গা ও উদ্বাস্তুদের খাদ্য, পোশাক এবং আশ্রয়ণ সহায়তার কাজও করে যাচ্ছে। তারা শিশুদের জন্য শোনপচা চরে রওশন আরা স্কিল সেন্টারের পাশাপাশি আমাল উচ্ছ্বাস স্কুল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইশরাত করিম বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে সব মানুষের সমান সুযোগ থাকবে। যেখানে সব পুরুষ ও নারী একই অধিকার অর্জন করতে পারবে।’ ইশরাত করিমের বাবা ইস্কেন্দার করিম ও মা উম্মে হাবিবা জেসমিন।