`ভাইরে প্যাটের জ্বালায় ঘরে থাকন যায় না’
`আম্রা গরিব মানুষ, আমাগো খবর ক্যারা রাকে। দ্যাশের অবসস্থা ভালা না জানি। ভাইরে প্যাটের জ্বালায় ঘরে থাকন যায় না। কাম পাইলে কয়ডা চ্যাল নিয়া যামু।’ কথাগুলো আক্ষেপ করে বলছিলেন উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা থেকে আসা দিনমজুর মহব্বত আলী।
একই রকমের কথা বললেন মহব্বতের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা তার সঙ্গীরা।
এক সপ্তাহ ধরে কোনো কাজ না পেয়ে একবেলা খেয়ে দুবেলা না খেয়ে কাজের সন্ধানে প্রতিদিনই মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকেন মহব্বত এবং তার সঙ্গীরা।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারের নেওয়া সতর্কতামূলক পদক্ষেপে জনশূন্য হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট। প্রয়োজন ব্যাতীত মানুষ ঘরের বাইরে আসছে না।
এ অবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
চলতি বোরো মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের জেলা রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট থেকে খেটে খাওয়া শত শত শ্রমজীবী মানুষ মির্জাপুরসহ আশপাশের এলাকায় কাজ করতে আসেন।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এবার ওইসব শ্রমজীবী মানুষদের তেমন দেখা না গেলেও কিছু মানুষ এখনো মির্জাপুরর বিভিন্ন গ্রামে রয়ে গেছেন।
গোড়াই নাজিরপাড়া এলাকায় অবস্থানকারী গাইবান্ধা জেলার মহব্বত, মানিক, ফজলু, কুড়িগ্রামের বাচ্চু, ময়মনসিংহের আজিজসহ ১০/১২ জন শ্রমজীবী মানুষ প্রতিদিন সকালবেলা মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে এসে অপেক্ষা করেন কাজ পাওয়ার আশায়।
গৃহস্তের দেখা না মিললে ফিরে যেতে হয় শূন্য হাতে। এমনিভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেছে মহব্বত, মানিক, ফজলু, বাচ্চুসহ আরও অনেকের।
মঙ্গলবার সকাল ৬টায় মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে কাজের আশায় দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমজীবী ওই মানুষগুলোর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
কাজের মৌসুমে কাজ না পেয়ে তারা খুবই হতাশ। কাজ না পেলে একবেলা খেয়ে দুবেলা না খেয়ে দিন কাটাতে হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সবাইকে ঘরে থাকার কথা তারাও জানেন। তবু বাইরে আসার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, কাজ না করলে খামু কি? প্যাটের জ্বালায় ঘরে থাকন যায় না ভাই।
কারো কাছ থেকে খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘গরিবের খবর রাখে কে? গরিবগো কাম কইরা খাইতে অয়। তাই বিপদের মধ্যেও কাজের লাইগা বাইরে আইছি।’