কোনো খাবার তো পাইনি, আমরা খাব কী?
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘর থেকে বাইরে যেতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। মানুষ যেন ঘর থেকে বাইরে বের হতে না পরে সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, গ্রাম পুলিশ একযোগে কাজ করছে।
তবে এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। এ অবস্থায় সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার মানুষদের মাঝে খাবারের জন্য শুরু হয়েছে হাহাকার।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় পদ্মপুকুর বাজারসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা বাকের আলীর মেয়ে আমিরন বিবি (৫৫)। কপোতাক্ষ নদে জাল দিয়ে মাছের রেণু ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চলে তার। নদে এখন মাছ ধরা বন্ধ। এতে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
আমিরন বিবি বলেন, ঘরে চাল নেই। নদে মাছের রেণু ধরে বিক্রি করে প্রতিদিন ৩০০-৩৫০ টাকা রোজগার হতো। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে নদে মাছ ধরা বন্ধ। বাড়িতে ৬-৭ কেজি চাল ছিল। গত কয়েকদিন ধরে সেই চালগুলো মেয়ে আর আমি খেয়ে শেষ করে দিয়েছি। তরকারি নেই। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি আমরা। কোনো জনপ্রতিনিধি এখনও খোঁজ নিতে আসেনি আমাদের।
একই এলাকার দাউদ আলীর স্ত্রী মনজিলা খাতুন। কপোতাক্ষ নদ তীরে বেড়িবাঁধের ওপর তাদেরও বসবাস। একই চিত্র তাদের পরিবারের।
মনজিলা খাতুন বলেন, নদে মাছের রেণু ধরা বন্ধ। সরকার এখন বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। গ্রাম পুলিশ আমাদের বের হতে দিচ্ছে না। সরকার খাওয়ার ব্যবস্থা করেনি। কোনো খাবার তো পাইনি। আমরা খাব কী? আমরা দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। খুব কষ্টে দিন পার হচ্ছে আমাদের।
একই চিত্র জেলার উপকূলজুড়ে। হাহাকার শুরু হয়েছে উপকূলীয় বাসিন্দাদের মাঝে। নিরুপায় হয়ে পড়েছেন এসব মানুষ।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ঘোষিত নির্দেশনা সমূহ যথাযথ পালন করছে ইউনিয়নবাসী। কয়েকদিন আগে গরিব মানুষের মাঝে ফেয়ারপ্রাইজের ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছিল। খেটে খাওয়া অভাবী মানুষ এখন বাড়িতে বসে সেগুলো খাচ্ছেন।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, উপকূলজুড়ে খাবারের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। ইউনিয়নের আট হাজার ৩০০ পরিবারের মধ্যে পাঁচ হাজার জেলে পরিবার এখন গৃহবন্দি। এসব পরিবার অসহায়। করোনা পরিস্থিতিতে আরও অসহায় হয়ে পড়েছে তারা।
তিনি বলেন, গাবুরা ইউনিয়নে ৪২ হাজার মানুষ। পরিবার আট হাজার ৩০০। রোববার দুপুরে উপজেলা পরিষদ থেকে জানিয়েছে, আপনি ৫০ জনের জন্য খাদ্যসামগ্রী পেয়েছেন। এত অসহায় মানুষের মাঝে আমি ৫০ জনকে কিভাবে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করব। প্রয়োজনের তুলনায় এটা খুবই কম।